বিশেষ প্রতিবেদন

প্রাণ থেকেও নিষ্প্রাণ হতভাগা রাজীব!

‘প্রেসার ১২০/৭০। হার্ট রেট ১৪০, জ্বর ১০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জিসিএস লেবেল ৩।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) ৩০ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন রোগীর শয্যাপাশে মনিটরে লাল নীল বাতিতে প্রদর্শিত ওইসব তথ্য দেখে কর্তব্যরত নার্স চিকিৎসককে দুই বাসের চাপায় মারাত্মক আহত হতভাগ্য রাজীবের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করছিলেন।

Advertisement

দুপুর তখন ১২টা। আইসিইউ’র ভেতর প্রবেশ করতেই কর্তব্যরত চিকিৎসক একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোনার বেডটি চোখের ইশারায় দেখিয়ে জানালেন, ওই বেডে চিকিৎসাধীন রাজীব। সারা শরীরে অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার। অস্ত্রোপচারের পর ডান হাতের কাঁধের কাছাকাছি পর্যন্ত সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো। দেখে মনে হলো সটান সোজা হয়ে যেন বেঘুরে ঘুমাচ্ছে। হাত,পা, চোখসহ শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের নড়াচড়া নেই। শুধু বুকের খাঁচাটা ধীর লয়ে উঠানামা করছে।

চিকিৎসকরা জানান, ভেন্টিলেটর মেশিনে রেখে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রাজীবকে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তার হার্ট নড়াচড়া করলেও ব্রেন একেবারেই কাজ করছে না। জিসিএস বা গ্লাসগো কমা স্কেল মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে রোগীর কনসাসনেস লেবেল নির্ধারণ করা হয়। জিসিএস লেবেল সর্বোচ্চ ১৫ ও সর্বনিম্ন ৩ থাকে। ৭-৮ পর্যন্ত থাকলেও স্বাভাবিক বলে ধরে নেয়া হয়। রাজীবের জিসিএস সর্বনিম্ন ৩।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজীবের চিকিৎসায় গঠিত সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, প্রাণ থেকেও নিষ্প্রাণ হতভাগ্য রাজীব। গত ৫ এপ্রিল থেকে আইসিইউতে। অর্থোপেডিকস বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. শামসুজ্জামানের গঠিত টিমের তত্ত্বাবধানে রাজীবের চিকিৎসা চলছে।

Advertisement

তারা বলেন, বাস দুর্ঘটনায় রাজীব হাত হারালেও মস্তিষ্কের মাঝামাঝি ডানদিকে থেতলে যাওয়াই রাজীবের শারীরিক অবস্থার অবনতির প্রধান কারণ। চিকিৎসার ভাষায় একে ব্রেন কনটিউশন (মস্তিষ্ক থেতলে যাওয়া) বলে। এ ধরনের রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম, চিকিৎসা নেই বললেই চলে।

ব্রেন কনটিউশনের রোগীর বেঁচে উঠার ইতিহাস রয়েছে কি-না জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান, সম্প্রতি তারা ইন্টারনেটে দেখেছেন ২২ বছর পর এক রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। এখন তারা ব্রেনের ফুলে যাওয়া হ্রাস ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ইনফেকশনমুক্ত রাখতে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৩ এপ্রিল দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সার্ক ফোয়ারার সামনে দুই বাসের রেষারেষিতে তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে হাতের অপারেশনের পর বুধবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

সোমবার দুপুরে আইসিইউ’র বাইরে অপেক্ষমাণ রাজিবের চাচি মনোয়ারা বেগম জানান, রাজিবের বাবা-মা কেউ নেই। সে খালা জাহানারা বেগমের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতো। তিনি জানান, চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন রাজীবের সুস্থ হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

Advertisement

এমইউ/জেএইচ/এমএস