ভাড়া বাড়িতে আর কার্যক্রম চালাতে হবে না বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি)। ২০২.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বিটিআরসি ভবন। প্রকল্পের সব খরচ সরকার থেকে বহন করা হবে।
Advertisement
প্রকল্পটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়িত হবে।
আগামী জুলাই থেকে চালু হতে যাওয়া এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হবে ২০২০ সালের জুনে। রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র শেরেবাংলা নগরে প্রকল্পটির স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিটিআরসি সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির নিজস্ব ভবন না থাকায় বর্তমানে ঢাকার রমনাস্থ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনের তিনটি ফ্লোরে ১,১২,০০০ বর্গফুট জায়গা ভাড়া করে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাছাড়া, ভাড়া বাবদ বিটিআরসিকে প্রতি বছর ১১.০৮ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ সংস্থাটির দৈনন্দিন কাজসহ কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ যেমন- টেলিকম অপারেটরদের সেবার মান মনিটরিং, ৩-জি, ৪-জি ইত্যাদি তরঙ্গ বরাদ্দ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প ইত্যাদি সফলভাবে বাস্তবায়নে সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। উল্লেখ্য, অপারেটরদের সেবার মান ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মনিটরিংসহ কতিপয় কাজের জন্য বিটিআরসি’র অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে যা নিজস্ব ভবন ছাড়া সম্ভব নয়।
Advertisement
২০০২ সালে ৪১ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়ে ভাড়াকৃত অফিসে বিটিআরসি এর কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমান জনবলের সংখ্যা ৪৫৫ জন। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের ১০৫ জনবল নিয়ে ভাড়াকৃত ভবনে বর্তমানে ৫৬০ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী কর্মরত আছেন। ইতোমধ্যে আরও ৩২৭ জন কর্মকর্তা/কর্মচারীর প্রস্তাব অনুমোদনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া, দেশে টেলিডেনসিটি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাস্তবতার নিরিখে পরবর্তী ১০ বছরে বিটিআরসি’র নিজস্ব জনবলের প্রয়োজন হবে ১৫৬৪ জন এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সিস্টেম পুরোপুরি চালু হলে প্রয়োজনীয় জনবলের সংখ্যা হবে ৩১৫ জন। ফলে আগামী ১০ বছরে বিটিআরসি’র মোট জববলের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮৭৯ জন।
বিষয়গুলো বিবেচনায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ/বিটিআরসি ভবনটি নির্মাণের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় হতে শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও প্রশাসনিক এলকায় প্লট নং-ই-৫/এ এর ১.০ একর জমি বরাদ্দ পায়। ইতোমধ্যে বিটিআরসি জমির সমুদয় মূল্য পরিশোধ করে এর মালিকানা লাভ করেছে। এর ফলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ১৮ তলা ফাউন্ডেশন ও ৩টি বেসমেন্টসহ ১৩ তলা ভবন নির্মাণের জন্য ডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ২২১০৭.৭২ লক্ষ টাকা প্রাক্কলন করে বাস্তবায়নকাল প্রস্তাব করা হয় অক্টোবর ২০১৬ হতে জুন ২০১৯ পর্যন্ত।
উক্ত ডিপিপি’র উপর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অন্যানোর মধ্যে ভবনটির উচ্চতা নির্ধারণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র সংগ্রহ, স্থাপত্য নকশা আরও আধুনিক মানে করা সম্ভব কিনা এবং চূড়ান্ত স্থাপত্য নকশায় ভবনে প্রস্তাবিত ৪০০ সিটের হল রুমটি টপ ফ্লোরে না রেখে গ্রাইন্ড/১ম ফ্লোরে সংস্থান রেখে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ/বিটিআরসি কর্তৃক ডিপিপি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিটিআরসি ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছে। বেসামরিক ও বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত ছাড়পত্রে উচ্চতা সীমা ১৫০ ফুট নির্ধারণ করায় বর্তমানে ভবনটি ১৩ তলার পরিবর্তে ১২ তলা নির্মাণের সংস্থান রেখে স্থাপত্য অধিদফতর কর্তৃক স্থাপত্য নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সে আলোকে এবং পিইস সভার অন্যান্য সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ প্রকল্পটির ডিপিপি পুনর্গঠন করেছে। পুনর্গঠিত ডিপিপি’র ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০২.৬৫ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকাল প্রস্তাব করা হয়েছে জুলাই ২০১৭ হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত।
Advertisement
এ বিষয়ে বিটিআরসি'র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আমরা কাজ করছি, এগিয়ে যাচ্ছি, কাজের ক্ষেত্র বেড়েছে। নিজস্ব ভবন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অর্জনের পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন আইন-২০০১ অনুসারে ৩১ জানুয়ারি ২০০২ তারিখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) গঠিত হয়। গঠনের পর হতে বিটিআরসি টেলিযোগাযোগ খাতের সকল অপারেটরদেরকে সাশ্রয়ী মূল্যে আধুনিক ও নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান নিশ্চিত করাসহ দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব পালন করে আসছে।
আরএম/এমবিআর/পিআর