দেশজুড়ে

বাঙ্গির বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

‘মোরা এইবার মন মত ফলন পাইছি। পরিবার লইয়া ভালো আছি। খ্যাতের ফলন ট্রাক ভইরা ঢাকায় যায়। দেশের সব মানুষ মোগো অঞ্চলের বাঙ্গি কিনে। এইডা অনেক আনন্দের।’ কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার পত্তাশী ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মিয়া।

Advertisement

জেলার নাজিরপুর ও ইন্দুরকানী উপজেলায় যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই দিগন্ত জোড়া মাঠে চৈত্রের বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির সমারোহ। প্রায় সাড়ে তিন মাস নিবিড় পরিচর্যার পর মাঠে মাঠে এখন চলছে কৃষাণ-কৃষাণীদের বাঙ্গি তোলার হিড়িক। তাদের চোখ-মুখে আনন্দ।

বাঙ্গি চাষিরা বলছেন, এ বছর কোনও প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা না দেয়ায় এবং পোকামাকড়ের উপদ্রপ কম থাকায় বাঙ্গির ভালো ফলন হয়েছে। এতে অতুলনগরের কৃষাণ-কৃষাণীরা খুশিতে আত্মহারা। এ বছর বাঙ্গির ভালো দাম পাবেন বলে আশায় বুক বেঁধে আছেন চাষিরা। এনজিও থেকে নেয়া চড়া সুদের ঋণও সহজেই পরিশোধ করতে পারবেন। তবে বাঙ্গির কাঙ্ক্ষিত বাজার দর পাওয়া নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত কৃষকরা।

বাঙ্গি চাষি বাশার সেখ (৪৫) জানান, উৎপাদিত বাঙ্গি দ্রুত রফতানি এবং পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তারা খরচ পুষিয়ে অন্যত্র বিক্রি করতে পারছেন না। এ কারণে অনেক ফসল খেতেই নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। স্থানীয় বাজারে মৌসুমের শুরুতেই বাঙ্গির দাম ভালো পাওয়া গেলেও তিন-চার সপ্তাহের মধ্যে সেই দাম দ্রুত কমতে শুরু করে বলে জানান তিনি।

Advertisement

বর্তমানে স্থানীয় বাজারে বড় আকারের একটি বাঙ্গির দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, মাঝারি আকারের দাম ৬৫ থেকে ৭০ এবং ছোট আকারের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা।

পত্তাশী ইউনিয়নের কৃষক জব্বার মিয়া জানান, মাত্র তিন মাসের মাথায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন তাদেরকে আলোর মুখ দেখিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার বাঙ্গি ট্রাকবোঝাই করে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাচ্ছে।

কৃষক মিজান শেখ জানান, নজিয়ানগরের বালিপাড়ার ৬২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষকরা নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে অর্থাৎ জৈবসার তৈরি ও প্রয়োগের মাধ্যমে বাঙ্গির বাম্পার ফলন পেয়েছেন।

Advertisement

নাজিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিগবিজয় হাজরা বলেন, উত্তরের জনপদ নাজিরপুরে চলতি খরিপ মৌসুমে প্রায় ১০০ একর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। উৎপাদনও এ বছর বেশ ভালো।

তিনি আরও জানান, এখানকার পরিবেশ ও বেলে দো-আঁশ মাটির কারণে বাঙ্গির চাষ অত্যন্ত উপযোগী। যে কারণে প্রতি বছর এখানে বাঙ্গি চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হেনা মোহাম্মদ জাফর বলেন, আমি নিজে বাঙ্গির ফলন দেখতে গিয়েছি। সত্যিই মনমুগ্ধকর দৃশ্য। বাঙ্গির বাম্পার ফলন দেখে মন জুড়িয়ে যায়। কৃষকদের বলেছি যে কোনও ধরনের সহযোগিতা দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।

হাসান মামুন/আরএআর/জেআইএম