দোতলার একটি বেডরুমে নির্বাক হয়ে বসেছিলেন মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা। তার পাশে বসে আছেন কয়েকজন স্বজন। ভয়ার্ত চোখে মুখে উদভ্রান্তের মতো ঘরের চারপাশে তাকাচ্ছিলেন তিনি।
Advertisement
বেডের পাশে কাঁচে বাঁধানো এক বৃদ্ধার ছবি দেখিয়ে পাশে স্বজনদের উদ্দেশ্যে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলছিলেন, ‘দেখেন, আমার মৃত শ্বাশুড়ির ছবিটিকেও ওরা কেমন করে আছড়ে আছড়ে ভেঙেছে। ওরা, ওই মুখোশধারীরা পরিকল্পিতভাবে আমাদের হত্যা করতে এ হামলা চালিয়েছিল।’
এ সময় উপস্থিত স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছিলেন, যা গেছে মালের ওপর দিয়ে গেছে। আপনারা যে বেঁচে আছেন সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। এ কথা শুনে ডুকরে কেঁদে উঠেন ওই ভদ্রমহিলা।
এ ভদ্রমহিলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানের সহধর্মিনী সালমা জামান। রোববার দিবাগত রাতে কোটা সংরক্ষনের দাবিতে আন্দোলনকারী শত শত কথিত শিক্ষার্থী নামের সন্ত্রাসীদের নারকীয় হামলার ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।
Advertisement
আজ (সোমবার) দুপুর ১২টায় জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ভিসিপত্নি সালমা জামান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টার দিকে যখন শত শত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাসভবনের বাইরে হৈচৈ করছিলেন তখন ঘুনাক্ষরেও চিনতে করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে এমন নারকীয় হামলা চালাতে পারে।
এ সময় বাসভবনে কর্তব্যরত ৮জন পুলিশ সদস্য ও গৃহপরিচারিকারা ছাড়া শুধুমাত্র পরিবারের চারজন সদস্য ভিসি, ভিসিপত্নি ও দুই ছেলে মেয়ে অবস্থান করছিলেন বলে তিনি জানান।
ভিসিপত্নি বলেন, তখন গভীর রাত। লাইট নিভিয়ে সবাই ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। কোটা সংরক্ষণ বাতিলের দাবিতে শাহবাগে তখনও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। অন্যান্য দিন এ সময় ঘুমিয়ে পড়লেও এ দিন তিনি (ভিসি) তখনও ঘুমিয়ে পড়েননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ক্যাম্পাসের পরিবেশ শান্ত রাখতে পরামর্শ দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, তখনই বাসভবনের বাইরে শত শত নারী ও পুরুষ কণ্ঠের উচ্চকণ্ঠে চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে শোনা যায়। তারা ভিসি বিরোধী নানা শ্লোগান দিচ্ছিলো। হঠাৎ করে তারা গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। ভাঙ, ধর, মার বলে কয়েকশ ছেলেমেয়ে বারান্দার ফুলের টপগুলো ভাঙতে থাকে। বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ওপর থেকে তারা এ দৃশ্য দেখে কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না।
Advertisement
তারা লাঠিসোটা হাতে দরজা জানালা ভেঙে চুরমার করতে থাকে। মুখোশধারী দুই তিনশ পুরুষ প্রথমে নিচতলা ও পরে দ্বিতীয় তলার সিড়িতে আয়না ভাংচুর করতে থাকে। এ সময় শুধু ভিসি ও তার ছেলে নিচে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলে তিনি জানান।
সালমা জামান বলেন, আমি মেয়েকে নিয়ে বাড়ির এক কোনার একটি কক্ষে আশ্রয় নিই। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে বাড়ির প্রতিটি ঘরে চলে ভাংচুরের তান্ডব।’
এসআর/জেআইএম