মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের সেখানে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ অনুকূল নয় বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দফতরের সহকারী মহাসচিব উরসুলা মুয়েলার। রোববার জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন।
Advertisement
গত বছরের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে ক্লিয়ারেন্স অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশি বাংলাদেশে পাড়ি দিয়েছে।
১৯৭০’ র দশকের দিকে রাখাইনের দক্ষিণ এবং মধ্যাঞ্চলে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একই ধরনের অভিযানে প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে; তাতে জাতিগত নিধনের আলামত স্পষ্ট।
Advertisement
তবে মিয়ানমার বরাবরের মতো সব অভিযোগ অস্বীকার করে অাসছে। দেশটি বলছে, শরণার্থীরা ফিরে এলে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু রাখাইনে পুনর্বাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা পাঠালেও দেশটি সেখান থেকে মাত্র ৩৭৪ জনকে ফেরত নিতে রাজি আছে।
মিয়ানমার বলছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার মতো উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কাজে নিয়োজিত সংগঠনের মুখ্য সমন্বয়ক অং তুন থেট বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। ভবনগুলো প্রস্তুত। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো প্রস্তুত রয়েছে। আমরা যতুটুকু পেরেছি তা করেছি। তারা যদি নিরাপদ বোধ না করে তাহলে আমাদের করার কিছু নেই।’
জাতিসংঘ কর্মকর্তা উরসুলা মুয়েলার বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে স্বেচ্ছামূলক, সম্মানজনক ও দীর্ঘমেয়াদে প্রত্যাবাসনের পরিবেশ অনুকূল নয়।’
Advertisement
ছয় দিনের মিয়ানমার সফর শেষে বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে দেয়া, সামাজিক সংযোগ, জীবনযাত্রা ও চাকরির সুযোগের মতো জটিল ইস্যুর সমাধান করতে হবে।’
অন্যদিকে, আন্দামান সাগরে আরও রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা থাকতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে সংস্থাটির এই সতর্কতা দেওয়ার দিনেই ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশ থেকে সাগরে ভাসতে থাকা অবস্থায় পাঁচ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, খাবার ও পানি সংকটে থাকা বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা সাগরে ভাসছে।
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের বড় অংশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও অনেকেই থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়েছে ।
আসন্ন বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবির থেকেও অনেকে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে পারে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি। তখন থেকেই থমকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির কার্যক্রম।
রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর চুক্তির সমালোচনা করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলছে, নিপীড়িত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে নিরাপদে থাকবে না।
এসআইএস/জেআইএম