বিনোদন

দ্বন্দ্ব-বিভাজনে এফডিসি, অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঢাকাই সিনেমা

ভেতরে ভেতরে যতই প্রতিযোগিতা আর একে-অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকুক সামগ্রিক স্বার্থে এক থাকেন চলচ্চিত্রকর্মীরা। কিন্তু গেল বছরের পরিচালক সমিতি ও শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পর থেকেই বিভাজনের ধুম লেগেছে চলচ্চিত্রপাড়ায়। চলচ্চিত্র পরিচালক, শিল্পী, নৃত্য পরিচালক সমিতিসহ নানা সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত চলচ্চিত্র পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া, শাকিব খান, মৌসুমীসহ আরও অনেকের।

Advertisement

এর সূত্র ধরেই গড়ে উঠেছিল বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ফোরাম। কিছুদিন পর সেখানেও ভাঙনের শব্দ শোনা যায়। অভিযোগ উঠেছে এইসব বিভাজনের মধ্যস্থতা না করে পক্ষপাতিত্ব করছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুক হক ইনু। চলচ্চিত্র পরিবারের পক্ষ থেকে মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও উঠেছিল।

মাঝখানে কিছুটা সময় সবকিছু শান্ত থাকলেও আবার উত্তপ্ত চলচ্চিত্র আঙিনা। এবার তথ্যমন্ত্রী ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন এফডিসির সঙ্গে সরাসরি বিরোধে জড়ালো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। চলচ্চিত্র দিবসে সভাপতিত্বকে ঘিরে সেই বিরোধ ও দুই পক্ষের বিভাজনটা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

দুইভাগে আলাদাভাবে পালিত হতে যাচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। একপক্ষের আয়োজক বরাবরের মতো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এফডিসি। অন্যদিকে পৃথকভাবে অভিনেতা ফারুকের নেতৃত্বে এ দিবস পালনের আয়োজনে বর্ণিল প্রস্তুতি নিয়েছে চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি।

Advertisement

জানা গেছে, প্রতিবারের ন্যায় এবারও সকালে কবুতর উড়িয়ে চলচ্চিত্র দিবসের উদ্বোধন করা হবে। এরপর দিনভর চলবে নানা আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সভাপতিত্ব করতে পারেন এফডিসির এমডি আমীর হোসেন। এই পক্ষের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেখা যেতে পারে জাজ মাল্টিমিডিয়া ঘেঁষা তারকাদের। হাজির থাকতে পারেন মৌসুমী, ওমর সানিসহ আরও অনেক শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলী।

সোমবার এফডিসিতে গিয়ে দেখা যায়, জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। এখানে চলবে চলচ্চিত্র দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠান। তবে তেমন কোনো সাজসজ্জা চোখে পড়েনি।

অন্যদিকে এফডিসি প্রাঙ্গণেই চলচ্চিত্র দিবস পালনের আয়োজনে বর্ণিল প্রস্তুতি নিয়েছে চলচ্চিত্র স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি। অভিনেতা ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে এদিকের আয়োজন। আয়োজন সফল করতে তার সঙ্গে রয়েছেন অভিনেতা আলমগীর, পরিচালক সমিতির নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার, বদিউল আলম খোকন, শাহীন সুমন, শিল্পী সমিতির নেতা মিশা সওদাগর, রিয়াজ, জায়েদ খান, ফেরদৌস, নৃত্য পরিচালক সমিতির নেতা মাসুম বাবুলসহ নানা সংঠনের নেতাকর্মীরা।

এই আয়োজনের শুরু হবে সকাল সাড়ে ১০টায় এফডিসি প্রাঙ্গণে চলচ্চিত্র দিবস উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে। এরপর র‌্যালি করে যাওয়া হবে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে।

Advertisement

সেখান থেকে ফিরে হবে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন। ফেরদৌস ও পিয়া জান্নাতুলের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবেন পপি, সাইমন, মাহি, নতুনসহ একঝাঁক তারকা। এই আয়োজনের সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ হাসান ইমাম।

দুই পক্ষের আয়োজনে কে এগিয়ে থাকলো সে নিয়ে আলাদাভাবে প্রশংসা বা সমালোচনা হয়তো হবে। কিন্ত চলচ্চিত্রের জাতীয় দিবসে এই বিভাজন চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হতাশ করেছে, অবাক করেছে সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না। যে ইন্ডাস্ট্রি জাতীয় স্বার্থেও এক হয়ে চলতে পারে না সেই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যত নিয়েও অনেক কথা থেকে যায়। কারণ, এফডিসি হলো চলচ্চিত্র শিল্পের অভিভাবক, নিয়ন্ত্রক। সেই এফডিসিই যখন ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের প্রতিপক্ষ হয়ে যায় তখন ইন্ডাস্ট্রির পথচলা ও উন্নয়ন অনেকটা অরণ্যে রোদনের মতো।

তাই চলচ্চিত্র দিবসে চলচ্চিত্রের সাধারণ দর্শকদের দাবি, এই বিরোধ কাটিয়ে উঠুক ইন্ডাস্ট্রি। চলচ্চিত্রের এই মন্দার দিনে এক হয়ে পথচলার বিকল্প কিছু নেই। অনেকেই এই ব্যাপারে দ্রুত সমঝোতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এলএ/বিএ/এমএমজেড/জেআইএম