হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হয়ে হাওরের বুকে পড়ে থাকা সেই কিশোরীর মরদেহের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর এবার সেই ধর্ষকের ছবি ভাইরাল হয়েছে।
Advertisement
ধর্ষণে জড়িত উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউপির মহিলা সদস্য কলম চান বিবির ছেলে বাবুলকে ধরিয়ে দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঝড় ওঠেছে।
সেইসঙ্গে ধর্ষকের ছবি নিয়ে ফেসবুকে ট্রল বানানো হয়েছে। ধর্ষকের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে অনেকেই স্ট্যাটাস দিয়েছেন, ‘সে পলাতক, ধর্ষককে ধরিয়ে দিন, আমরা ধর্ষকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি, বাংলার মাটিতে কোনো ধর্ষকের স্থান হবে না।’ ধর্ষক বাবুলের ছবির সঙ্গে এমন মন্তব্য দিয়ে ছবিটি শেয়ার করেছেন অনেকেই।
এদিকে, ধর্ষক বাবুলের মা মহিলা ইউপি সদস্য কলম চান বিবি ও ধর্ষণ এবং খুনের সহযোগী ঈসমাইল মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাই পলাতক বাবুলের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়ে তাকে দ্রুত গ্রেফতারে পুলিশকে সহায়তা করতে সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
Advertisement
বিউটি আক্তার (১৬) নামে ওই কিশোরীকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ব্রাহ্মণডুরা ইউপির মহিলা সদস্য কলম চান বিবির ছেলে বাবুলের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে ঘটনার মূল আসামি বাবুল এখনও অধরা। পুলিশ তার খোঁজ পায়নি।
মামলার বিবরণে বাদী উল্লেখ করেন, স্থানীয় মোজাহের উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিউটি আক্তারকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো মহিলা মেম্বারের ছেলে বাবুল মিয়া। একপর্যায়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২১ জানুয়ারি বাবুল তাকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করে। এ বিষয়ে গত ৪ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা করা হয়।
নির্যাতিত কিশোরীর বাবার ভাষ্য, এ ঘটনার পর বিউটিকে লাখাই উপজেলার গুনিপুর গ্রামে তার নানার বাড়িতে রেখে আসেন। ১৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে টয়লেটে গিয়ে আর ঘরে ফিরেনি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরদিন ১৭ মার্চ গুনিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ।
Advertisement
এ ঘটনায় ১৮ মার্চ কিশোরীর বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রিজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
মামলার বাদী সায়েদ আলী বলেন, প্রধান আসামিকে গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ইতোমধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে একজন এজাহার নামীয় ২ নম্বর আসামি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথম মামলার পর ধর্ষণের বিচার না হওয়ায় ওই কিশোরীকে হত্যার শিকার হতে হয়েছে। পরে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করে ক্ষতবিক্ষত মরদেহ হাওরের বুকে ফেলে রাখা হয়। বিচার চাইতে গিয়ে এমন পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ধর্ষকের হাতে খুন হয় বিউটি।
শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামিকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। এলাকার মানুষজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বাবুলকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
সৈয়দ এখলাছুর রহমান খোকন/এএম/এমএস