উত্তর কোরিয়ার সবুজ এবং হলুদ রঙয়ের একটি বিশেষ ট্রেনের বেইজিং যাত্রা ঘিরে ব্যাপক রহস্য দেখা দিয়েছে। এই বিশেষ ট্রেনের বেইজিং যাত্রার সময় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়; যা দেখে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিশেষ এই ট্রেনে চেপে উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন চীন সফরে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Advertisement
কিমের চীন সফর ঘিরে যে রহস্য শুরু হয়েছে তা যদি সত্যি হয়; তাহলে ২০১১ সালে উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতায় আসার পর দেশের বাইরে এটিই হবে তার প্রথম সফর। এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে কিছুদিন আগে রাজি হয়েছে কার্যত বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোরীয় উপদ্বীপের এ দেশটি।
সেই বৈঠকের আগে কিম জং উনের বেইজিংয়ে রহস্যময় সফর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে; রীতিমতো শোরগোল শুরু হয়েছে বিশ্ব পরিমণ্ডলে।
জাপানের টেলিভিশন চ্যানেল নিপ্পন টিভির একটি ভিডিও ফুটেজে বলা হয়েছে, হলুদ ফিতায় ঘেরা সবুজ রঙয়ের বিশেষ এ ট্রেনের সঙ্গে মিল রয়েছে কিম জং উনের বাবা কিম জং ইলের ২০১১ সালে বেইজিং সফরে ব্যবহৃত ট্রেনের সঙ্গে। মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে একই ধরনের ট্রেনে চেপে চীন সফরে গিয়েছিলেন কিমের বাবা।
Advertisement
এর আগে জাপানের সংবাদমাধ্যম কিয়োডো নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, উত্তর কোরিয়ার উঁচু স্তরের কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি বিশেষ ট্রেন চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত শহর ড্যানডংয়ে দেখা গেছে। ট্রেনটিতে সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রয়েছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, ট্রেনটি চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছায় সোমবার। এ বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্রের বরাত দিয়ে ব্লুমবার্গ বলছে, চীনের রাজধানীতে পৌঁছেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিমের বেইজিং সফর নিশ্চিত করেনি।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা ও কিম জং উনের দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখতেই দেশটির বর্তমান ক্ষমতাসীন এই নেতা চীন সফরে ট্রেন বেছে নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন বেইজিংয়ের রেনমিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক চেং জিয়াওহে।
তিনি বলেন, ঐতিহ্য অনুসরণ করার জন্য কিম জং উন সম্ভবত সফরে ট্রেন বেছে নিয়েছেন। এই ঐতিহ্য চলে আসছে তার দাদা কিম ইল সাংয়ের আমল থেকে। ১৯৮২ সালে প্রথমবারের মতো চীন সফরে তিনিও ট্রেন ব্যবহার করেন।
Advertisement
২০০৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার দৈনিক চুসান ইলবো এক প্রতিবেদনে জানায়, বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে কিম জং ইল শুধুমাত্র উত্তর কোরিয়ার ভেতরেই ছয়টি বিলাসবহুল ট্রেন ব্যবহার করতেন। তার জন্যই বিশেষভাবে তৈরি ২০টি স্টেশনে এসব ট্রেন যাত্রা বিরতি করতো।
বিমান ভ্রমণ এড়িয়ে চলতেন কিম জং উনের বাবা কিম জং ইল। চীন, রাশিয়া এবং পূর্ব ইউরোপে তার বিরল সফরে ট্রেনই ছিল তার বাহন। উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বলছে, কিমের বাবা হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার সময় ট্রেনেই ছিলেন।
কিম জং উন সম্ভবত তার বাবার ট্রেনগুলো ব্যবহার করছেন। চুসান ইলবোর তথ্য বলছে, এসব ট্রেন অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং স্যাটেলাইট ফোন, ফ্ল্যাট স্ক্রিন টেলিভিশন, কনফারেন্স রুম, শয়নকক্ষ ও অভ্যর্থনা হলে সুসজ্জিত। ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতির বেশি চলে না।
বেইজিংয়ের রেনমিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক চেং জিয়াওহে বলেন, এই সফর সম্পর্কে যেসব তথ্য জানা যাচ্ছে, সেসবের সঙ্গে কিম জং ইলের সফরের তথ্য প্রায় একই।
প্রথমত, তারা একটি সবুজ ট্রেন বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, উভয় সফরই আকস্মিক। সফরের আগে পর্যন্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তৃতীয়ত, সফর সম্পর্কে প্রথম তথ্য পাচ্ছে জাপানি গণমাধ্যম এবং তারাই প্রতিবদন করছে। এমন সব তথ্য পাওয়ার পর আমার মনে হচ্ছে, চীন সফরে গেছেন কিম জং উন।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে বলছে, ধারণা করা হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার জ্যেষ্ঠ নেতাদের বহনকারী ট্রেনটি মঙ্গলবার বেইজিং ত্যাগ করেছে। নাটকীয় এক সফর শেষে ফিরে যাওয়া ট্রেনটিতে সম্ভবত উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন আছেন বলে কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে।
এদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীল দৈনিক চুসান ইলবো দেশটির অজ্ঞাত জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলছে, চীন সফরে যাওয়া উত্তরের প্রতিনিধি দলে কিমও রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার বেইজিং ছেড়েছেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার বামপন্থী সংবাদমাধ্যম ‘হ্যানকিওরেহ’ অবশ্য বলছে, সোমবার বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করতে বেইজিংয়ে গেছেন কিম। বেইজিং ত্যাগের আগে অজ্ঞাত স্থানে ওই বৈঠক হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কোনো সূত্রের বরাত দেয়নি এই সংবাদমাধ্যম।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।
এসআইএস/এমএস