স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
Advertisement
মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে বেলা ১০টা ৫৮ মিনিটে সচিবালয়ে আসেন নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী। বৈঠক শেষে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে বের হয়ে আসেন বিএনপি নেতারা।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে আগামী ২৯ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে এখনও সমাবেশের অনুমতি পায়নি দলটি।
বৈঠক শেষে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনসভা করার ব্যাপারে আমাদের দলের সিদ্ধান্ত আছে। আমরা কয়েকবার এটার তারিখ ঘোষণা করেছি, কিন্তু অনুমতি না পাওয়ার জন্য আমরা করতে পারিনি। আমরা ঘোষণা করেছি ২৯ তারিখে আমরা সভাটি করতে চাই। আমরা আজকে মূলত সেই ব্যাপারে কথা বলার জন্য হোম মিনিস্টারের কাছে আসলাম।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বলেছি আপনারা এখনও বলেন আমরা ২৯ তারিখে এই সভাটি করতে চাই। উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, সভা করার ব্যাপারে সাধারণভাবে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এ ব্যাপারে যারা সংশ্লিষ্ট তিনি আজকেই তাদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন। আমরা তার কথার জন্য অপেক্ষা করব।’
‘উনার যে রেসপন্স, তা কোয়াইট পজিটিভ। আমাদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। তবে অপেক্ষা করতে হবে ফলাফলের জন্য।’
সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে আপনারা আশাবাদী কি না- জানতে চাইলে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘উনি তো আপত্তি করলেন না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের জানাবেন। দেখেন আশাবাদী তো সব মানুষের হওয়া উচিৎ। নিরাশার অনেক ঘটনা আমাদের আছে। আমরা আবারও নিরাশ হব এটা আশা করি না। কিন্তু যে পর্যন্ত না আমরা ইতিবাচক ফল পাই সেই পর্যন্ত খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই।’
সমাবেশের অনুমতির জন্য কেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আসতে হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ‘আমরা বার বার ডিএমপির কাছে দরখাস্ত করেছি, অনুমতি পাইনি। আমরা মনে করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডিএমপির উপরের অফিস। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসছি।’
Advertisement
‘আমরা বিশ্বাস করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হতে পারে। তারপরও যদি না হয় তাহলে আর কী করা যাবে। আমরা তো রক্ত দিয়ে স্বাধীন করা দেশে গণতন্ত্র অনুশীলন করতে চাই, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে চাই। সেই কর্মসূচি পালনে, গণতন্ত্র অনুশীলনে সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না...পাওয়া যায় না, এটা আপনারা জানেন। কিন্তু ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে না, এটা যাতে না হয় সেই চেষ্টার জন্যই আজকে আমরা এসেছিলাম।’
এ ছাড়া প্রাসঙ্গিক অনেক বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে জানিয়ে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘প্রচুর গ্রেফতার হচ্ছে, নানান রকমের নিপীড়ন হচ্ছে- এগুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি। বিশেষ করে আমাদের দলের অনেক মহিলা কর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। কেউ কেউ রিলিজ হয়েছেন, কেউ কেউ এখনও হননি।’
তিনি বলেন, ‘এ ছাড়া অতি সাধারণ কর্মী যারা, তারা প্রচুর গ্রেফতার হচ্ছেন ও তারা কষ্ট পাচ্ছেন। আমরা বলেছি ভাই আমাদের গ্রেফতার করেন অসুবিধা নেই। কিন্তু সাধারণ কর্মীরা বিশেষ করে নারী কর্মীদের এত বেশি সংখ্যায় গ্রেফতার করছেন এবং তাদের ডেট পড়ছে এক মাস দুই মাস পর। এটা বন্ধ করেন। উনি এটা সিরিয়াসলি নিয়েছেন। বলেছেন উনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন। যাতে এ ব্যাপারে আমাদের কোনো অভিযোগ না থাকে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা যে সব ঘটনা ঘটছে, মেজর হাফিজ সাহেব তার এলাকা সম্পর্কে বলেছেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরী সাহেব তার এলাকা সম্পর্কে কথা বলেছেন। জাতীয় নেতা হিসেবে সারাদেশের কথাও তারা বলেছেন।’
অনুমতি দেয়ার দায়িত্ব ডিএমপি কমিশনারের বিএনপি নেতারা অনুমতির বিষয়ে আশাবাদী হলেও রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, বিএনপির সমাবেশের অনুমতি দেয়ার দায়িত্ব ডিএমপির। তারা (বিএনপির ৩ নেতা) বলেছেন ২৯ তারিখের সমাবেশের পারমিশন (অনুমতি) দেয়া হচ্ছে না। আমি বলেছি কী কারণে দেয়া হচ্ছে না- নিশ্চয়ই কোনো কারণ সেখানে থাকতে পারে। তার পরের দিন কিংবা যেকোনো দিন আপনাকে দেবে, যেদিন কোন ধরনের অসুবিধা না থাকে। দেবে না এমন নয়, কারণ আপনারা তো এর আগেও করেছেন।
আরএমএম/এনএফ/পিআর