জাতীয়

জ্বালানি পরিবহনে নৌপথে অতিমাত্রায় নির্ভরশীল বাংলাদেশ

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নৌপথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বেশিরভাগ দেশ এখন পাইপলাইনে বিনিয়োগ করছে। যেসব দেশ পাইপলাইনে বিনিয়োগ করতে পারছে না তারা রেলপথকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ জ্বালানি পরিবহনে এখনো নৌপথের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল যা পরিবেশের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) তথ্য মতে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫৪ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানির ব্যবহার হয়। এ জ্বালানির ৯০ ভাগ বা ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টন নৌপথে পরিবহন করা হয়। দেশব্যাপি রেল নেটওয়ার্ক থাকলেও রেলপথে জ্বালানি পরিবহন হয় মাত্র আট ভাগ বা চার লাখ ৩২ হাজার টন। মাত্র দুই শতাংশ বা এক লাখ আট হাজার টন সড়কপথে পরিবহন করা হয়।তবে রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির ডিপো থেকে স্বল্প দূরত্বে বিভিন্ন ডিলার ও ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি পরিবহনে ট্যাংকলরি অবদান রাখছে। এদিকে বাংলাদেশে জ্বালানি তেল পরিবহনে নৌপথের আধিপত্য থাকলেও প্রতিবেশি ভারতে পাইপলাইন ও রেলপথে সিংহভাগ তেল পরিবহন করা হয়।ইন্ডিয়ান অয়েলের তথ্য মতে, সেদেশের জ্বালানির ৩৪ শতাংশ পাইপলাইনে, ৩০ শতাংশ রেলপথে এবং বাকি ২৭ শতাংশ উপকূলীয় নৌযান ও সড়কপথে পরিবহন করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মোট জ্বালানির ৬৪ শতাংশ পাইপলাইনে, ২৭ শতাংশ নৌপথে ও বাকি নয় শতাংশ রেল ও সড়কপথে পরিবহন করা হয়।বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে প্রতিবছর জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। কিন্তু জ্বালানি পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। জ্বালানি পরিবহনে রেলপথের সীমাবদ্ধতা, পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহনের পরিকল্পনা না থাকা এবং নৌপরিবহন ব্যবস্থায় ন্যূনতম মানসম্পন্ন যান ব্যবহার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।সম্প্রতি শ্যালা নদীতে সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলসহ ট্যাংকার ডুবে যাওয়ায় সুন্দরবন এলাকার পরিবেশে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসে। ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় থেকে বাঁচতে অবশ্যই নৌপথের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে।জানতে চাইলে পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) মহাসচিব ডা. এম এ মতিন জাগো নিউজকে বলেন, নৌপথে জ্বালানি পরিবহনের জন্য যে রকম পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার তাতে ঘাটতি রয়েছে। জ্বালানি পরিবহনে অতিরিক্ত সতর্কতা ও তদারকি থাকা প্রয়োজন হলেও তা মানা হচ্ছে। নৌপরিবহনের গাফিলতি ও নজরদারির বাইরে থাকার কারণে নৌপথ জ্বালানি পরিবহন ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নৌপথে পরিবহন খরচ কম বলে সরকার এ পথকে সর্বোত্তম মাধ্যম হিসেবে গণ্য করছে। সড়কপথের চেয়ে রেলপথ তুলনামূলক সস্তা হলেও বিপিসির আগ্রহের অভাবে রেলপথ জনপ্রিয় হয়নি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, রেলপথে জ্বালানি তেল পরিবহন ৫৬১টি ওয়াগন রয়েছে। আরো ১৬৫টি ব্রড গেজ ও ৮১টি মিটার গেজ ওয়াগন কেনা হয়েছে।তবে বিপিসির আগ্রহ না থাকায় এগুলো পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে না। মূলত নৌপথে কম ব্যয়ই এর কারণ। রেলপথে জ্বালানি তেল পরিবহন বাড়াতে হলে বিপিসিকেই উদ্যোগ নিতে হবে।নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনে অতিনির্ভরতা নিয়ে যোগাযোগ করা হলে বিপিসির চেয়ারম্যান এ এম বদরুদৌজা জাগো নিউজকে বলেন, নৌপথ পরিবহনে খরচ কম। সড়ক ও রেলের সঙ্গে তুলনা করলে দুর্ঘটনাও কম। এ কারণে নৌপথেই বেশির ভাগ তেল পরিবহন করা হয়। তিনি বলেন, পাইপলাইন ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ বলে এ বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই।আরএম/এসএইচএস/বিএ

Advertisement