ধর্ম

মানুষ যেভাবে শয়তানের ধোঁকায় আক্রান্ত হয়

আল্লাহ তাআলা মানুষকে ফাহ্শা’ কাজ থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ করেছেন। কারণ শয়তান মানুষ সুক্ষ্নভাবে ‘ফাহশা’ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর বিধান থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরিয়ে নেয়। আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকের অনেক স্থানে ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুষমন।’ অথচ শয়তান সাড়ে ৬ হাজার বছর একটানা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ‘মুআল্লিমুল মালায়িকা’ মর্যাদা লাভ করেছিল। অবশেষে আল্লাহ তাআলার ছোট্ট একটি নির্দেশ অমান্য করে চিরদিনের জন্য অভিশপ্ত হয়ে যায়।

Advertisement

অভিশপ্ত হওয়ার পর থেকে শয়তান মানুষকে গোমরাহী করতে আল্লাহর সঙ্গে প্রতিজ্ঞা করে এবং কেয়ামত পর্যন্ত বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা লাভ করে।

শয়তান মানুষকে সরাসরি কোনো আক্রমণ না করে ধীরে ধীরে ইসলামের বিধান থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। এটা হলো শয়তানের সুক্ষ্ন কূটচাল। ইমাম রাজি রহমাতুল্লাহি আলাইহি শয়তানের ষড়যন্ত্রের একটি পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন। শয়তান কিভাবে মানুষকে দান-সহযোগিতা থেকে ফিরিয়ে রাখে। তাহলো-

‘শয়তান সর্বপ্রথম মানুষকে এ প্ররোচনা দেয়, আল্লাহর হুকুমে তোমরা উত্তম সম্পদ ব্যয় করো না; দান করতে হলে বিনষ্ট ও অকেজো দেখে কিছু দিয়ে দাও অন্যথায় তুমি নিজেই ফকির হয়ে যাবে।

Advertisement

যখন মানুষ শয়তানের এ কথার অনুসরণ করে তখন সে আরও কঠোর হয়, ভালো-মন্দ কোনো কিছুই আল্লাহর পথে ব্যয় করতে দেয় না, এমনি আবশ্যক কর্তব্য বা ফরজ ব্যয় তথা জাকাত আদায় থেকেও মানুষকে বিরত রাখে।

এমনকি আত্মীয়-স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালনে এবং মানুষের আমানত আদায় করতেও শয়তান বাধা দেয়। যখন মানুষ এমন অবস্থায় উপণীত হয় তখন পাপাচারের শোচনীয় পরিণামের কোনো ভয় তার অন্তরে অবশিষ্ট থাকে না। এভাবে সব ধরনের পাপাচার সে সহজে করে যায়।

কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বান্দার এ অবস্থাকে ‘ফাহ্শা’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনি ভাবে আল্লাহর প্রতিটি বিধান নামাজ, রোজা, হজের ক্ষেত্রেও শয়তান মানুষকে এভাবে ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে ফিরিয়ে রাখে।

নামাজের সময় হলে সে মানুষকে বলতে থাকে এখনো অনেক সময় বাকি আছে। যখন নামাজের ওয়াক্ত একদম শেষ পর্যায়ে চলে আসে, তখন শয়তান বলে, কাজটা খুবই জরুরি; আচ্ছা কাজা নামাজটা আজ পরের ওয়াক্তের সময় কাজা করে নিলেও হবে। এভাবে সে মানুষকে বেনামাজিতে পরিণত করে।

Advertisement

রোজার ক্ষেত্রে সেহরির সময় হলে শয়তান বলতে থাকে আরো অনেক সময় আছে; আর কিছুক্ষণ পরে ওঠলেও চলবে; যখন ওয়াক্ত চলে যায়; তখন বলতে থাকে বিনা সেহরিতে রোজা রাখবে; এভাবে সে মানুষকে সুক্ষ্নভাবে রোজা থেকে বিরত রাখে।

হজের ক্ষেত্রেও সরাসরি নেতিবাচক কিছু না বলে বিভিন্ন অজুহাত মানুষের সামনে তুলে ধরে। ধীরে ধীরে হজের প্রতি পুরোপুরি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ফেলে। আর কুরআনুল কারিমের পরিভাষায় আল্লাহ তাআলা এ কাজগুলোকে ‘ফাহ্শা’ বলে সম্বোধন করেছেন।

এ ‘ফাহ্শা’ কাজগুলোকে ছেড়ে দেয়াই ঈমানদারের একান্ত কাজ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে শয়তানের এ কথাগুলো উল্লেখ করে বলেন, ‘শয়তান মানুষকে মন্দ কাজের নির্দেশ দেয়।

যারা এ ‘ফাহ্শা’ কাজ থেকে ফিরে থাকতে চেষ্টা করবে এবং ফিরে থাকবে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর আল্লাহ পাক তোমাদেরকে ক্ষমা করার তথা আখেরাতের নাজাতের এবং দুনিয়াতেও অধিকতর প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’

পরিশেষে….শয়তান মানুষকে সরাসরি কোনো কাজের ব্যাপারেই নিষেধ করে না। প্রথমে অজুহাত দাঁড় করানোর মাধ্যমে বিলম্ব করায়। অতঃপর ধীরে ধীরে ফরজ বিধানগুলো থেকে কৌশলে ফিরিয়ে রাখে।

সুতরাং শয়তানে অনুসরণ ও অনুকরণ নয়; দান করতে হবে সর্বোত্ত এবং প্রিয় জিনিস। নামাজের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। জাকাতের অর্থ নির্ধারিত ব্যক্তিকে পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে হবে। রোজার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। হজের সামর্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আদায় করাই ঈমানদারের একান্ত করণীয় কাজ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শয়তানের সব ধরনের ধোঁকা এবং প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ও মর্যাদাবান প্রতিদান লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস