খেলাধুলা

ছক্কা মেরে বাংলাদেশকে ফাইনালে তুললেন মাহমুদউল্লাহ

এমনও ম্যাচ হয়! এভাবেও জয় আসে! রীতিমত থ্রিলার! তার চেয়েও যেন বেশি কিছু। টান টান উত্তেজনা। স্নায়ুক্ষয়ের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে গেছে যেন। পেন্ডুলামের মত ঝুলছে ম্যাচ। একবার বাংলাদেশের দিকে তো আরেকবার শ্রীলঙ্কার দিকে ঝুলে যাচ্ছে ম্যাচ। কে জিতবে এই ম্যাচে? শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস্য জয়টি এসেই গেলো বাংলাদেশের। ইনিংসের এক বল হাতে রেখে ছক্কা মেরেই বাংলাদেশকে নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে তুলে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৮ বলে মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৪৩ রানের অবিশ্বাস্য ঝড়ো ইনিংসই বাংলাদেশকে তুলে দিলো ফাইনালে।

Advertisement

কী ছিল না এই ম্যাচে! একটি আদর্শ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য যেসব রসদের প্রয়োজন তার সবই ছিল। ম্যাচের রাশ কখনও স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার হাতে, কখনও বাংলাদেশের হাতে। ব্যাট-বলের লড়াই ছাড়িয়ে প্রেমাদাসার লড়াই যে কখন মনস্তাত্বিক রূপ নিয়েছে সেটা টের পেলো না অনেকেই। যখন দেখা যায় দুই শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার রবীন্দ্র উইমালাসিরি এবং রুচিরা পালিয়াংগুরুগে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বাউন্ডারি মারতে দেখলেও আফসোস করছেন। তখন বোঝা যায়, মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে আম্পায়ারদের মধ্যেও।

শেষ পর্যন্ত সেই উত্তেজনার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেলো ম্যাচের একেবারে শেষ ওভারে। শেষ ওভারে প্রয়োজন ১২ রান। টান টান উত্তেজনা। প্রতি বলে প্রয়োজন ২ রান করে। কিন্তু স্ট্রাইকে তখন মোস্তাফিজুর রহমান। অন্যপ্রান্তে একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কী করবেন তিনি। প্রথম বল ডট। কাঁধের ওপর দিয়ে গেলো। দ্বিতীয় বলও গেলো কাঁধের ওপর দিয়ে। আম্পায়ার নো বল ডাকলেন না। উল্টো রান নিতে গিয়ে রানআউট হয়ে গেলেন মোস্তাফিজ।

এ সময়ই বাধলো গণ্ডগোল। শ্রীলঙ্কান ফিল্ডারদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় লেগে যান মাহমুদউল্লাহ। কী কারণে যেন আম্পায়াররাও মাহমুদউল্লাহর ওপর ক্ষিপ্ত। বোঝা যাচ্ছিল না, কেন এমন অবস্থা। একবার মনে হচ্ছিল, মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক দেবেন না আম্পায়ার। আবার মনে হচ্ছিল, পরপর দুটি কাঁধের ওপর ডেলিভারির কারণে নো দেয়া নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।

Advertisement

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে দেখা গেলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর রুবেল হোসেনকে উঠে আসতে বলছেন। আম্পায়ার আর ম্যাচ রেফারিসহ অন্য কর্মকর্তারা থামানোর চেষ্টা করছেন তাকে। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে মাঠেই থাকতে বললেন। অবশেষে বিরোধ থামলো। স্ট্রাইকে থাকলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই।

শেষ চার বলে প্রয়োজন ১২ রান। তৃতীয় বলেই মাহমুদউল্লাহ মারলেন বাউন্ডারি। চতুর্থ বলে নিলেন দুই রান। শেষ দুই বলে প্রয়োজন আর ৬ রান। ছক্কা মারলেই হয়ে যায়। ঠাণ্ডা মাথায় যেন খুন করলেন তিনি বোলার ইসুরু আদানাকে। পায়ের ওপর ছিল বলটি। দারুণ এক ফ্লিক করলেন তিনি। বল গিয়ে আছড়ে পড়লো গ্যালারিতে। ছক্কা মেরেই বাংলাদেশকে ২ উইকেটের ব্যবধানে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার ৭০তম জাতীয় দিবসের টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠে গেলো বাংলাদেশ। ১৮ মার্চ এই প্রেমাদাসাতেই রোহিত শর্মাদের বিপক্ষে ট্রফির লড়াইয়ে মাঠে নামবে টাইগাররা।

তামিম ইকবাল যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, যেন অনায়াসেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাবে- এমনটাই ছিল পরিস্থিতি। কিন্তু ১২ ওভার পরেই যেন ম্যাচটা ঝুলে যায় শ্রীলঙ্কার দিকে। ওই সময়ই মাত্র তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে এক হাজার ছুঁয়েছেন মুশফিক। অপর প্রান্তে এই মাইল ফলকে সবার আগে পৌঁছা তামিম। ১২ ওভার শেষে দলের স্কোর ২ উইকেটে ৯৫। ইনিংসের ওই অবস্থায় শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ৬৮ রান। ২৭ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ তো জয়ের দিকেই ছুটছিল।

Advertisement

কিন্তু এমন নিরঙ্কুশ অবস্থায় থেকেও বাংলাদেশ যেন হুড়মুড় করেই ম্যাচ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিভাবে বেরিয়ে যেতে হয়, তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ তৈরি করছিল ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ১৫ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। ৩ উইকেটে ৯৭ রান থেকে হঠাৎ করেই ৫ উইকেটে ১০৯ বাংলাদেশ।

মূলতঃ ১৪তম ওভারে ১০৫ রানে ব্যক্তিগত ৫০ রানে (৪২ বলে ৪ বাউন্ডারি ২ ছক্কায়) তামিম আউট হয়ে যাওয়ার পরই শঙ্কাটা জেগে ওঠে। ১০৯ রানে সৌম্য সরকার, ১৩৭ রানে সাকিব আল হাসান এবং ১৪৮ রানে মিরাজ রানআউট হয়ে গেলে বাংলাদেশের জয় একেবারে যেন তীরে এসে তরি ডোবার মত হয়ে দাঁড়ায়।

কিন্তু অপর প্রান্তে তো পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রয়েছেন। যদিও ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর ভুমিকার কথাও বার বার উঁকি দিচ্ছিল। কিন্তু ১৮ বলে ৪৩ রান করা মাহমুদউল্লাহ শেষ ওভারে মাত্র ৩ বলেই নিলেন ১২ রান এবং ছক্কা মেরেই তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দিলেন গৌরবময় এক ফাইনালে।আইএইচএস/জেএইচ