নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটের দুর্ঘটনায় নিহত ৪৯ যাত্রীর মরদেহ রাখা হয়েছে ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি (টিইউ) টিচিং হাসপাতালের হিমঘরে। বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) পর্যন্ত ৩৫ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে। তবে নিহতদের অধিকাংশের দেহ সম্পূর্ণভাবে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। বোঝার উপায় নেই মরদেহগুলো কার। ফলে পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। আর এতে আরও ৩ সপ্তাহ সময় লাগবে।
Advertisement
পুড়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট করায় মরদেহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া দীর্ঘ হতে পারে বলে জানিয়েছেন টিইউ টিচিং হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ। এছাড়া জাগো নিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নিহতদের সম্পর্কে নানা তথ্য জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আদনান রহমান।
জাগো নিউজ : নিহতদের সবাই কি আগুনে পুড়ে মারা গেছেন নাকি অন্য কারণও পাওয়া গেছে? এছাড়া ডিএনএ টেস্ট ছাড়া পরিচয় শনাক্ত সম্ভব কিনা?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : এ পর্যন্ত যেসব মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে অধিকাংশই পুরোপুরি পুড়ে গেছে। মরদেহগুলোর সফট টিস্যুও সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গেছে। হাড়গুলো কালো হয়ে গেছে। তাই স্বজনদের মরদেহ দেখতে দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো চিহ্নিত করে বা ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে কোনোভাবেই শনাক্ত করা সম্ভব নয়। পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট লাগবেই।
Advertisement
জাগো নিউজ : তাহলে মরদেহের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে কবে?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : মরদেহ হস্তান্তরের জন্য এর সঠিক পরিচয় শনাক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েকটি ধাপে আমরা মরদেহ শনাক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রথমত, আমরা নিহতদের স্বজনদের কাছ থেকে মরদেহ চিহ্নিতকরণের কিছু তথ্য নিচ্ছি। (যেমন- একজন তথ্য দিয়েছে নিহত ভাইয়ের ডান হাত, কপালের ডান দিক এবং বাম পায়ের গোড়ালিতে পুরানো ক্ষত আঘাত ছিল)। আশা করছি শনিবারের (১৭ মার্চ) মধ্যে সব মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। আমরা পরিবারের কাছ থেকে সংগৃহীত শনাক্তকরণ চিহ্নগুলো নিয়ে মিলে গেলে মরদেহ দিয়ে দেব।
জাগো নিউজ : মরদেহ হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রিতার আশঙ্কা আছে কি?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : যদি অতি বীভৎস মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্ত না করা যায় তাহলে সেগুলোর ডিএনএ টেস্ট করা হবে। ডিএনএ টেস্টের জন্য পরিবারের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরে মরদেহের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখা হবে। নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের ফলাফল জানতে সব মিলে ৩ সপ্তাহের মতো সময় লাগবে।
Advertisement
জাগো নিউজ : হস্তান্তর প্রক্রিয়াটা আরও তরান্বিত করা সম্ভব কি না?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : বিমান দুর্ঘটনার ঘটনাটি এখন আর নেপাল কিংবা বাংলাদেশের ইস্যু নয়। এটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। তাই মরদেহ হস্তান্তরের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হচ্ছে।
জাগো নিউজ : জনবল সঙ্কটের কারণে মরদেহ হস্তান্তর বিলম্ব হচ্ছে কি?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার সঙ্গে হাসপাতালের তিনজন অধ্যাপক, চারজন সহকারী অধ্যাপক, আটজন আবাসিক ডাক্তার, পাঁচজন হেল্পার (সহকারী) এবং নেপালের ২৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছে। মূলত এটা জনবল সঙ্কটের বিষয় না। আমরা প্রতিটি মরদেহের খুঁটিনাটি তথ্য নিচ্ছি। এটা ডিটেইলড ওয়ার্কের বিষয়।
জাগো নিউজ : নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আপনাদের কাছে কতগুলো মরদেহ রয়েছে?
অধ্যাপক রিজেন শ্রেষ্ঠ : নেপালের কয়েকটি মিডিয়াতে আমি ৫১ জন মারা যাওয়ার সংবাদ পড়েছি কিন্তু আমাদের মর্গে সর্বমোট ৪৯ জনের মরদেহ রয়েছে। এটা নিয়ে বিভ্রান্তিতে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই।
প্রসঙ্গত, গত ১২ মার্চ (সোমবার) ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বিধ্বস্ত হয়। চার ক্রুসহ ৬৭ জন যাত্রী নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। বাকিদের উদ্ধার করে নেপালের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ (কেএমসি) হাসপাতাল, নরভিক হাসপাতাল, গ্রান্ডে হাসপাতাল, ওম হাসপাতাল ও মেডিসিটিতে ভর্তি করা হয়।
বিমানটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, মহিলা ২৮ ও দু’জন শিশু ছিল।
এআর/আরএস/এমএস