আকাশ জয়ের স্বপ্ন কমবেশি অনেকেই দেখেন। এ জন্য বৈমানিক হতে চান তারা। কিন্তু সবার পক্ষে আকাশে ওড়ার সুযোগ হয় না। গৎবাঁধা চেয়ার-টেবিলের কাজ যাদের টানে না, কাজের জায়গাতেও যারা নিজেকে মুক্ত বিহঙ্গের মতো মেলে ধরতে চান, তারা এ চ্যালেঞ্জিং পেশায় নিজেকে সমর্পণ করেন।
Advertisement
অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং এ পেশা নিয়ে আমাদের সবারই কম-বেশি আগ্রহ আছে, আছে নানা জিজ্ঞাসা। আর যদি এ পেশায় কোনো নারী হন তো কথাই নেই। যদিও এ দায়িত্বশীল পেশায় এখন পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাচ্ছেন দেশের নারীরা। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট পদেও এখন পদচারণা বাড়ছে নারীদের। একটা সময় পর্যন্ত দেশে নারী পাইলটের দেখা না মিললেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মোট ১৪০ পাইলটের মধ্যে এখন নারী পাইলটের সংখ্যা নয়। পুরুষদের মতো তারাও সাফল্যের সঙ্গে পালন করছেন পেশাগত দায়িত্ব।
বাংলাদেশ বিমানের এ নয় নারী পাইলটের একজন হলেন ক্যাপ্টেন তানিয়া রেজা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজে যিনি প্রতিনিয়ত উড়াল দেন দিগন্তে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি একজন সফল মানুষ। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি তার পেশা আর স্বপ্ন পূরণের কথা ব্যক্ত করেন।
জাগো নিউজ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে কবে যোগ দেন?
Advertisement
ক্যাপ্টেন তানিয়া : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে আমি ২০০০ সালে যোগ দেই ক্যাডেট পাইলট হিসেবে।
জাগো নিউজ : কী কী এয়ারক্রাফট চালানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার?
ক্যাপ্টেন তানিয়া : এফ ২৮, ডিসি ১০, এয়ারবাস ৩১০ ছাড়াও বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজে ফাস্ট অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের ক্যাপ্টেনের দায়িত্ব পালন করছি।
জাগো নিউজ : পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার শুরুটা কীভাবে?
Advertisement
ক্যাপ্টেন তানিয়া : বিমানবাহিনীতে কর্মরত আমার মামাদের অনুপ্রেরণায় একেবারে ছোটবেলা থেকে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। যে মামাদের দেখে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম পরে তাদের অনেকের সঙ্গে আমি ফ্লাইও করেছি। তাদের খুব মনে পড়ে।
জাগো নিউজ : পাইলট হওয়ার জন্য দেশ-বিদেশে সম্পন্ন করা কোর্সগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন…
ক্যাপ্টেন তানিয়া : খুব আগ্রহ নিয়ে ১৯৯৩ সালে ফ্লাইং একাডেমিতে ভর্তি হই। পরে বিশেষায়িত শিক্ষাগ্রহণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে পাড়ি জমাই। সেখানকার হিউস্টনের ‘ফ্লিচার এভিয়েশন’-এ কোর্স সম্পন্ন করে কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স-সিপিএল গ্রহণ করি। ২০০০ সালে দেশে ফিরে বিমানে যোগ দেই।
জাগো নিউজ : এ পেশায় যোগ দেয়ার পর অনুভূতি কেমন ছিল?
ক্যাপ্টেন তানিয়া : আমি সৌভাগ্যবতী। বিমান চালাতে রোমাঞ্চ বোধ করি। প্রথম ফ্লাইটের অনুভূতিটা ছিল ভিন্নরকম। প্রকাশ করার মতো নয়।
জাগো নিউজ : বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সম্পর্কে কিছু বলবেন…
ক্যাপ্টেন তানিয়া : বিমান আমাদের অহংকার। রাষ্ট্রায়ত্ত আকাশ পরিবহন সংস্থায় বৈমানিক হিসেবে কাজ করতে পেরে আমি খুবই গর্বিত। এখানে কাজের পরিবেশ খুব চমৎকার। নারী-পুরুষের কোনো বিবেধ বা বৈষম্য কখনও লক্ষ্য করিনি। সবসময় সম্মান ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। বিমানের দীর্ঘ চাকরি জীবনে নারী বলে কখনও কোনো ধরনের অসুবিধায় পড়তে হয়নি।
জাগো নিউজ : আপনি তো দেশের স্বনামধন্য চিত্রনায়ক ফেরদৌসের স্ত্রী, আপনার পেশাগত কাজে স্বামীর কোনো সহযোগিতা… ক্যাপ্টেন তানিয়া : হান্ড্রেড পারসেন্ট সহযোগিতা তার কাছ থেকে আমি পেয়েছি। তার সহযোগিতা না থাকলে আমি এত দূর আসতে পারতাম না। আমার মা ফিরোজা রেজা এবং প্রয়াত বাবা যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী রেজা রাজু, তাদের প্রেরণাই আমি আমার জীবনের চলার পথকে এমন বিস্তৃত করতে পেরেছি।
জাগো নিউজ : আপনার সংসারজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন?
ক্যাপ্টেন তানিয়া : আমার সফল জীবনের আশীর্বাদ হিসেবে আসে স্বামী চিত্রনায়ক ফেরদৌস। আমার ঘরে রয়েছে জগতের সব আলো নিয়ে আসা দুই কন্যা নুসরত ফেরদৌস ও নামিরা ফেরদৌস।
জাগো নিউজ : নারী দিবসে দেশের নারীদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?
ক্যাপ্টেন তানিয়া : দেশের সব নারীর স্বপ্ন দেখা উচিত। পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন ও সমাজের সব স্তরে নারীর বিচরণ ঘটুক- এ প্রত্যাশা করি।
আরএম/জেডএ/আরআইপি