সুন্দরী শ্রীদেবী দোলা দিয়েছেন কোটি পুরুষের মনে। তবে কেবলমাত্র একজন পুরুষই দোলা দিতে পেরেছিলেন সুপারস্টার শ্রীদেবীর মনে। তিনি ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। আশির দশকে ভারতজুড়েই তুমুল আলোচিত ও নন্দিত জুটি ছিলেন মিঠুন-শ্রীদেবী। তাদের প্রেমকাহিনী আজও অনেককে নস্টালজিয়ায় নিয়ে যায়।
Advertisement
জবরদস্ত কোনো প্রমাণ না থাকলেও বলিউডের অলিতে গলিতে ছড়ানো আছে এই দুই তারকার বিয়ের মুখরোচক গল্প। একটা সময় তাদের সম্পর্কে ভাঙন আসে। আলাদা হয়ে যান তারা। শ্রীদেবী অনেকটা জেদের বশেই বিয়ে করেন প্রযোজক বনি কাপুরকে। মিঠুনও অন্যথায় সংসার পাতেন। তারপর দীর্ঘদিন আর মুখোমুখি হননি মিঠুন-শ্রীদেবী।
বলিউড তাদের আর কখনোই একসঙ্গে দেখার সুযোগও পাবে না। কারণ, জীবনের মায়া কাটিয়ে পরপারে চলে গেছেন শ্রীদেবী। তার আকস্মিক মৃত্যু শোকে স্তব্দ করে দিয়েছে বলিউড। সেই শোকে শ্রীদেবীর এককালের প্রেমিক মিঠুনের বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে শ্রীদেবীর প্রয়াণের একদিন পর ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে শ্রীদেবীর সঙ্গে পরিচয়ের গল্প শোনাতে গিয়ে মিঠুনের স্মৃতিচারণ ছেপেছে। এই স্মৃতিচারণটি নেয়া হয়েছে মিঠুনের বই ‘আমার নায়িকারা’ থেকে।
সেখানে তিনি শ্রীদেবীর সঙ্গে পরিচয় নিয়ে বলেছেনন, ‘জাগ উঠা ইনসান’ ছবিটি করার সময় প্রযোজক রাকেশ রোশন জানালেন ছবির নায়িকা শ্রীদেবী। শুনে খুব খুশি হয়েছিলাম। কারণ শ্রীদেবী তখন ‘হটেস্ট’ নায়িকা। ওর অভিনয়, হাসি আর নাচে সম্মোহিত হিন্দি ছবির দর্শক। ওর সবগুলো ছবি আমার দেখা হয়নি। তবে জানতাম, আমার সঙ্গে ছবি করার বহু আগে থাকতেই ওর লক্ষ লক্ষ ফ্যান। সেই মেয়েই শুটিং চলাকালীন জানাল, ও নিজেই নাকি আমার ফ্যান। ‘ডিস্কো ড্যান্সার’ ছবিটা দেখেছে অন্তত কুড়িবার। মনের ভাললাগা ব্যক্ত করতে ওর বিন্দুমাত্র সঙ্কোচ ছিল না। পরিষ্কার মনের মেয়ে। কোনো কিছু ভালো লাগলে, পরিষ্কার জানাত। অহংকার ওর মধ্যে কখনো ছিলো না। কেউ বলতে পারবে না। ছিলো যেটা, আত্মসম্মানবোধ।’
Advertisement
শ্রীদেবী তার সবকিছুতেই মুগ্ধ হতেন দাবি করে বলেন, ‘শ্রীদেবীর পাগলামি শুরু হয়েছিলো আমাকে নিয়ে। আমার নাচে ও মুগ্ধ হতো। আমাদের প্রথম ছবিতে একটা গানের সিকোয়েন্স ছিল, যেখানে আমি বাঁশি বাজাব, ও নাচবে। শুটিংয়ের ফাঁকে জানালো, আমার বাঁশি শুনে ও মুগ্ধ। বলে বসলো- তুমি এত সুন্দর বাঁশি বাজাতে কোথা থেকে শিখলে মিঠুন?’ কোথাও না, নিজেই শিখেছি …শোনার পর আরও অবাক৷ অথচ নিজেই তো সকলকে অবাক করার মেয়ে। ওর রূপ-গুণ অভিনয়- রিয়েলি অসাধারণ অভিনেত্রী। ভেরি স্পনটেনিয়াস, ন্যাচারাল। কমেডিও চমত্কার করে। আর ডান্সার হিসেবে তো ওর তুলনাই নেই। ওর মুখে যখন নিজের মুগ্ধতা শুনে শুনে আমিও মুগ্ধ হলাম।’
শ্রীদেবীকে নিয়ে মিঠুন আরও বলেন, ‘মেয়ে হিসেবে অত্যন্ত ভদ্র -সভ্য , মার্জিত, রুচিশীল। দক্ষিণী শিক্ষিত, রক্ষণশীল পরিবারের মেয়েরা যেমন হয়, ঠিক সে রকম। শুটিংয়ে দেখতাম চুপচাপই থাকত। কোনো ছ্যাবলামি, ইয়ার্কি নেই। ফালতু কথা বলা নেই। প্রফেশনাল। কাজটুকুই ছিল ওর ধ্যান। আদারওয়াইজ মা-বোনের সঙ্গেই সময় কাটাত। ওর বোন লতার সঙ্গেও আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। খুবই মজার মেয়ে। মাকে ছাড়া লতার সঙ্গে থাকলেই দেখতাম, শ্রীদেবীর ভিতরের একটা ছেলেমানুষি সত্তা যেন জাগ্রত হত। ‘স্টার নায়িকা’র খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসত।’
শ্রীদেবীর সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মিঠুন বলেন, ‘আমরা হাসি-মজার মধ্যে দিয়েই কাজ করতে গিয়ে সম্পর্কে জড়িয়ে গেলাম। সেই সম্পর্কের সূত্রে আমি আর শ্রী ক্রমশ জড়িয়ে গেছিলাম একটা ভালোলাগার বন্ধনে। সেই সম্পর্কে হয়তো ছিল শান্তির প্রত্যাশা। চাহিদার প্রতিশ্রুতি।’
কেন ভেঙ্গে গেল সম্পর্কটা? সেই জবাবও দিয়েছেন মিঠুন। তিনি লিখেছেন, ‘দায়বদ্ধতা। জানি না, সত্যি জানি না। তবে এটুকু জানি, সেই ‘দায়’ কখনও আমি মেটাতে পেরেছি, কখনও হয়তো পারিনি। আর এই পারা, না-পারার মাঝেই আমার আর শ্রী-র সম্পর্কে তৈরি হল একটা দূরত্ব। বাকিটুকু কেবলই মন খারাপের স্মৃতি। আমি ওকে চিরকাল মনে রাখবো। শ্রীও আমাকে মনে রেখেছে, সে আমি জানি।’
Advertisement
দুজনের শেষ দেখা কোথায় কবে, সেই প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন মিঠুন। বলেন, ‘মনে আছে ’৮৯ সাল। ‘গুরু’র লাস্ট শট। পরিচালক উমেশ মেহরা চিন্তা করছে, আমাদের শট শেষ করা যাবে কি না। কারণ আমাদের সম্পর্ক তখন খুব খারাপ। আমি নিশ্চিত করেছিলাম উমেশকে, ‘ডোন্ট ওরি, আমি কথা দিচ্ছি, তোমার শট শেষ হবে। শ্রী আমার থেকে যদি দূরে সরেও যায়, ছবি শেষ না করে যাবে না। ও কাজের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। শ্রী আমার কথা রেখেছিলো। শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলো। সেই ছবি শেষ, আমাদের ‘বন্ধুত্ব’ও শেষ। আর ওর সঙ্গে দেখা হয়নি।’
এলএ/আরআইপি