বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর আদালতের কাছে কোনো নজির উপস্থাপন করা হয়নি বলে দাবি করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
Advertisement
রোববার জামিন আবেদনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
খুরশীদ আলম বলেন, ‘(উনারা) খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যে পয়েন্টে কথা বলেছেন আমি সেই পয়েন্টেই রিপ্লাই দিয়েছি। দুদক চেয়েছে যাতে উনার জামিন না হয়। আমরা নজির দেখিয়েছি যে শর্ট প্রিউডে দেয়া যায় না। উনারা কোনো নজির দেখিয়েছেন বলে আমার মনে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ জে মোহাম্মদ আলী দুটি গ্রাউন্ডে বেইল চেয়েছেন। একটা হলো সর্ট প্রিউড অব সেন্টেন্স এবং হেলথ কন্ডিশন। আদালতে আমার সাবমিশন ছিল, আমাদের আপিল বিভাগের বিচারপতি শাহবুদ্দীন আহমেদের একটি রায় আছে, সেখানে উনি হাইকোর্টকে বলেছেন, শর্ট প্রিউড অব সেন্টেন্স দিয়েছে। তুমি আপিল নিষ্পত্তি করে ফেল বেল না দিয়ে। যদি দেখা যাচ্ছে তুমি আপিল শুনানি করতে পারতেছো না তখন তুমি বেল কনসিডার কর।’
Advertisement
দুদকের আইনজীবী বলেন, ‘আর উনারা হেলথ কন্ডিশনে জামিন চেয়েছেন। ওখানে উনারা বয়সের কথাটা লেখেছেন, আমরা সেটার (বয়সের) ডিসপুট করিনি। তার ৭৩ বছর বয়স। কিন্তু যেসব ডিজিস (অসুস্থতা) এর কথা বললেন, তার সাপোর্টিং কোনো কাগজপত্র তিনি দেননি।’
দোষ এবং সাজা (কনভিকশন ও সেন্টেন্স) নিয়ে আদালত কি বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটা প্রশ্ন করেছি, আদালত বলেছে যে, উনাকে তো ৪০৯ ও ১০৯ এ কনভিকশন দিয়েছে। আমি বললাম মাননীয় আদালত, উনাকে কনভিকশন দিয়েছে ৪০৯ এবং ১০৯। কিন্তু উনাকে গিল্টি করেছেন ৪০৯, ১০৯ এবং ৫(২) ধারায়। কিন্তু উচ্চতর আদালতের সিদ্ধান্ত আছে, যদি দুটি ধারায় গিল্টি হয় উনাকে সাজা দিতে হবে একটা সেকশনে। এজন্য ৪০৯ এবং ১০৯ উনাকে সাজা দিয়েছেন। ৪০৯ ও ৫(২) ধারায় একইসঙ্গে সাজা দেয়া যাবে না। সেটা জাজ সাহেবের অবজারভেশনে আছে। উনি অবজারভেশনটা হাইকোর্টের ডিসিশনের আলোকে দিয়েছেন। সেই জায়গাটা আমি ওখানে দেখালাম।’
দুদকের এ আইনজীবী আরও বলেন, ‘উনার কাস্টডি প্রিউড ২ মাস ৫ দিন, এ শর্ট কাস্টুডি প্রিউডে বেইল চান, উনারা যে পয়েন্টে কথা বলেছেন আমি সেই পয়েন্টেই রিপ্লাই দিয়েছি। দুদক চেয়েছে যাতে উনার জামিন না হয়। আমরা নজির দেখিয়েছি যে শর্ট প্রিউডে দেয়া যায় না। উনারা কোনো নজির দেখিয়েছেন বলে আমার মনে নাই।’
নথি তলব করেছেন কত দিন লাগতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালতের আদেশেই আছে ১৫ দিনের মধ্যে হবে।’
Advertisement
এর আগে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য তার আইনজীবীদের আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট সিদ্ধান্ত দেন, খালেদার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের রায়ের যে নথি ১৫ দিনের মধ্যে চাওয়া হয়েছে, সে নথি আসার পর জামিন আবেদনের ওপর আদেশ দেয়া হবে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আইনজীবীদের আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। সেদিন খালেদার জরিমানা স্থগিত করে বিচারিক আদালতের নথি ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই শুনানির জন্য রোববার দিন ধার্য করা হয়।
আজ নির্ধারিত দিনে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। নিম্ন আদালতের নথি আসার পরই হাইকোর্ট জামিন আবেদনের ওপর আদেশ দেবেন বলে রেখে দিয়েছেন আদালত। আসামি, দুদক ও রাষ্ট্র তিনপক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী মো. আলী শুনানিতে বলেন, খালেদা জিয়া একজন বয়স্ক নারী, সর্বোপরি তিনি বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। তার যে সাজা দেয়া হয়েছে তা লঘু প্রকৃতির। আদালত এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তাকে জামিন দিতে পারে।
জামিনের তীব্র বিরোধিতা করে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ মামলাটি বিচারিক আদালতে নিষ্পত্তি হতে সাড়ে নয় বছর লেগেছে। আজ যদি জামিন দেয়া হয়, তাহলে হাইকোর্টে মূল আপিলের কখনই শুনানি হবে না। আদালতের উচিত নিম্ন আদালতের নথি আসার পরই জামিনের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা।
এফএইচ/জেএইচ/আরআইপি