বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে কর্মী নেয়ার জন্য আগামী ২৯ জুলাই তিন দিনের সফরে ঢাকায় আসছে মালয়েশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের একটি টেকনিক্যাল প্রতিনিধি দল। ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেবেন দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ওহাব বিন মোহাম্মদ ইয়াসিন। প্রতিনিধি দলটি ৩১ জুলাই পর্যন্ত অবস্থান করে মন্ত্রণালয় ও জনশক্তি রফতানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বায়রার নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন।সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া সফর করেন। সফরের সময় মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জাহিদ হামিদির সঙ্গে বৈঠক করেন খন্দকার মোশাররফ।বৈঠকে আগামী তিন বছরে বাংলদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান মালয়শিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জাহিদ হামিদি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্যে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ২০০৭ সালে চালু হয়ে আবার ২০০৯ সালে বন্ধ করে দেয়া হয়। মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে দেশটির সঙ্গে জিটুজি (গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট) চুক্তি করে। ওই চুক্তির আওতায় ২০১৩ সাল থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। এ সময় ২০ লাখ লোকের চাহিদা থাকলেও কর্মী গেছেন মাত্র পাঁচ হাজার।এমন বিপর্যয়ের কারণে জিটুজির পাশাপাশি বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের মাধ্যমে কর্মী নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে মালয়েশিয়া সরকার। সনাতন এ পদ্ধতিতে কীভাবে বিপুল সংখ্যক কর্মী যাবেন এবং কোন পদ্ধতিতে যাবেন, বাছাই প্রক্রিয়া কেমন হবে, এসব বিষয় নিয়ে প্রতিনিধি দল আলোচনা করবে।প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী তিন বছরে এই ১৫ লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় প্রেরণের লক্ষ্য নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ লক্ষ্যে মালয়েশিয়ান টেকনিক্যাল প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশ সফর করছে। এরপর উভয় দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি সই হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব কর্মী প্রেরণ শুরু হবে।বিদ্যমান জিটুজি বা সরকারিভাবে শুধুমাত্র প্লান্টেশন সেক্টরে পামওয়েল গাছ রোপণ ও পরিচর্যার কাজে সামান্য সংখ্যক কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। ২০০৭ সালে শুরু হয়ে ২০০৯ সালের পর মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সাল থেকে জিটুজির আওতায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাচ্ছে বাংলাদেশ থেকে।চুক্তির পর সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, জিটুজি পদ্ধতিতে বছরে কমপক্ষে এক লাখ কর্মী যাবেন মালয়েশিয়ায়। কিন্তু গত দুই বছরেরও বেশি সময়ে পাঁচ হাজারের মতো কর্মী গেছেন দেশটিতে। জিটুজি অকার্যকর হওয়ায় বায়রাসহ বিভিন্ন মহল থেকে ক্ষোভ ও দাবি তোলা হয় জিটুজি চুক্তি বাতিলের। এ নিয়ে মন্ত্রীর একরোখা আচরণ ভালোভাবে নেয়নি জনশক্তি রফতানিকারকরা।দীর্ঘদিন পর যখন মালয়েশিয়া শ্রমবাজার খোলার প্রেক্ষাপট তৈরি হলো ঠিক সেই মুহূর্তে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে অন্য মন্ত্রণালয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নাম প্রকাশে অনিচ্চুক একাধিক জনশক্তি রফতানিকারক।প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব খোন্দকার ইফতেখার হায়দার মালয়েশিয়ার প্রতিনিধি দলের ঢাকা সফরে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে জানান, বিপুলসংখ্যক কর্মী কোন পদ্ধতিতে যাবেন, বাছাই প্রক্রিয়া কেমন হবে, রফতানিকারি এবং নিয়োগ কর্তার দায়দায়িত্ব কী হবে সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা হবে।সম্ভাবনার এই শ্রমবাজার খুলে যাওয়া এবং মালয়েশিয়ার উচ্চ পর্যায়ের একটি টেকনিক্যাল প্রতিনিধি দলের সফর বিষয়ে বেসরকারি জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশার বলেন, মালয়েশিয়ান প্রতিনিধি দল আসছে। কীভাবে এবং কোন পদ্ধতিতে কর্মী যাবে, বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা কী পাবে যাবতীয় বিষয় নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা হবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত কমিশন এবং সামান্য সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করবে।উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের পর একের পর এক সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হতে থাকে। ইতোমধ্যে ঢাকঢোল পিটিয়ে সৌদি আরবের শ্রমবাজার চালুর ঘোষণা হলেও দেশটিতে শুধুমাত্র স্পর্শকাতর নারী গৃহকর্মী নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে দেশটি। এ নিয়ে হতাশায় ছিলেন মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরাও। শ্রমবাজারের এই ক্রান্তিকালে নতুন করে মালয়েশিয়ার দুয়ার খোলার খবর রফতানিকারকদের মধ্যে ব্যপক সাড়া ফেলেছে।আরএম/এসকেডি/বিএ/আরআই
Advertisement