বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেছেন, বিভিন্ন সময় মিয়ানমারের উসকানি সত্ত্বেও আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি। যে কারণে আমরা আমাদের বর্ডার ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখতে পেরেছি।
Advertisement
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজিবি কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। তবে মিয়ানমার ১৮ বার এপিসি হেলিকপ্টারে সীমান্ত সীমারেখা লঙ্ঘন করে, যা অন্যান্য রাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে। আমরা সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছি বলেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে কোনো ব্লেম করতে পারেনি মিয়ানমার। তাদের কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয়নি।
রাজধানীর পিলখানায় বাহিনীটির সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে সীমান্ত নিরাপত্তা ও চোরাচালানরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিজিবির কার্যক্রম জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোববার এসব কথা বলেন বিজিবি প্রধান।
প্রতিবেশী দুই রাষ্ট্রের সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে লাভ নেই
Advertisement
বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে লাভ নেই। যাকে দূরে রাখতে কিংবা ঠেলে দিতে পারবেন না তার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির বিকল্প নেই। বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমার। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ নয়, বরং সম্পর্ক উন্নতিই আমাদের লক্ষ্য।
সীমান্তে সিটমহল ও জনসংখ্যাগত কিছু সমস্যা ছিল তা অধিকাংশই সমাধান হয়েছে। শুধু মুহুরির চড় নিয়ে একটা ঝামেলা রয়েছে। আমরা সেটাও মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছি- বলেন তিনি।
ইয়াবা-মাদক নির্মূল বিজিবির একার কাজ নয়
বিজিবির তৎপরতা সত্ত্বেও কেন ইয়াবাসহ মাদক আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, ইয়াবাসহ মাদক নির্মূল করা বিজিবির একার কাজ নয়। আমরা সবাই জানি দেশের বাইরে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসে। সেদেশের বলা যায় সবাই কম বেশি ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
Advertisement
দিনের বেলায় মাদক খুব কম আসে। রাতেই বেশি আসে। একদিকে টহল দিলে আরেক দিক খালি হয়ে যায়। সেটা কাভারের চেষ্টা চলছে। সীমান্ত রাস্তা নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেলে আগের তুলনায় মাদকবিরোধী পদক্ষেপ বেশি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, বিজিবি সীমান্তে কাজ করে, ইন্টারনাল কাজ করে না। দেশের ভেতরে ইয়াবা যাতে না আসে এমন পরিস্থিতিতে মাদকের চোরাচালান বন্ধে সব বাহিনীকে যেমন উদ্যোগী হওয়া উচিত তেমনি সাধারণ মানুষের সচেতনতা জরুরি।
বর্ডার সুরক্ষা, নারী ও শিশু পাচার আগের চেয়ে কমে এসেছে দাবি করে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘আমাদের আরো কিছু সময় দিন, আমরা মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতির বাস্তবায়ন করতে পারবো। সেজন্য সবার ঐকান্তিক চেষ্টা, সহযোগিতা ও পরামর্শ দরকার। আমরা বর্ডার অবজারভেশন পোস্টের (বিওপি) মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে এনেছি। কুইক রেসপন্স ফোর্স গঠন করেছি। মোবাইল পার্টি টহলে থাকে। ৫৩৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের ৪২০ কিলোমিটার আমরা বিওপির নিয়ন্ত্রণে এনেছি। বাকি এলাকাতেও কাজ চলছে। আমরা সীমান্ত সুরক্ষার জন্য রাডার ও সেন্সর স্থাপন করবো। এসব প্রক্রিয়া চলছে।
দেশের চারটি এলাকায় ইয়াবাসহ মাদকের চোরাচালানে বিজিবি সদস্যদের জড়িত থাকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিবি প্রধান বলেন, ‘হাতের সব আঙুল সমান নয়। বিজিবির সকল সদস্য এক নয়। দুই-একজন যে অপরাধে জড়াচ্ছে তা নয়। তবে আমাদের আইন খুব শক্ত। মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য প্রমাণ পেলে চাকুরিচ্যুতির পাশাপাশি ও কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।
বিডিয়ার হত্যা মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল জওয়ানদের সঙ্গে ভালো আচরণ ও বিজিবিকে বাণিজ্যিক কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা। সে নির্দেশনা অনুসরণ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, আমাদের কমান্ডিং অফিসাররা সেটা জানে। জওয়ানদের সঙ্গে আরো সম্পর্কের উন্নতি কীভাবে করা যায় সে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আর সীমান্ত ব্যাংক ট্যুরিজম সেন্টারসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে একটিং বিজিবির কমান্ডিং কেউ জড়িত নেই। সাবেক বিজিবির কর্মকর্তারা জড়িত।
জেইউ/জেডএ/আইআই