আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতিম খানার টাকা এসেছে, সে টাকা এতিমের কাছে যাবে, সে টাকা কেন থাকবে? আজকে ধরা পড়ে গেছে। ওই এতিমের টাকা মেরে। কারণ এতিমের টাকা মারা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে না। এতিমের টাকা মেরে খেলে তার শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনও দেয়। সেই শাস্তি আজকে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, তারাও পেয়েছে। লজ্জা থাকলে জীবনে আর লুটপাট করবে না, দুর্নীতি করবে না। মানুষের অর্থ সম্পদ নেবে না। কোর্ট রায় দিয়েছেন, এখানে আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু অন্যায় করলে যে শাস্তি পায় সেটা আজকে প্রমাণ হয়েছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির কাজ ছিলো অত্যাচার করা, দুর্নীতি করা, মানুষের টাকা লুটপাট করা। খালেদা জিয়ার ছেলে দুর্নীতি করে টাকা পাচার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কোর্ট বলেছে, খালেদা জিয়ার ছেলে দুর্নীতিবাজ। আরও একটা ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরের কোর্ট শাস্তি দিয়েছে। বাংলাদেশ হিসেবে প্রথম আমরা ওই টাকা ফেরত এনেছি। ক্ষমতায় থাকতে জনগণের সম্পদ লুট করেছে। হত্যা, দুর্নীতি, জনগণের সম্পদ লুটপাট ছাড়া তারা আর কিছুই জানে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জানেন, পদ্মা সেতু বানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ২০০১ সালে ওই খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই কাজ বন্ধ করে দেয়। আমরা ২০০৯ এসে আবার পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করি। সে সময় বিশ্ব ব্যাংক আমার উপর, আমার সরকারের উপর, আমার বোনের উপর দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিলো। রাজনীতি করি জনগণের জন্য। আমার বাবা সারা জীবন এ দেশের জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করেছেন। তার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে, তিনি জীবন দিয়েছেন। তার কন্যা হয়ে জনগণের টাকা মেরে খাবো, চুরি করবো, দুর্নীতি করবো এ জন্য ক্ষমতায় আসিনি।
Advertisement
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনলো তখন আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, আমরা দুর্নীতি করিনি, পারলে প্রমাণ করো। আল্লাহর রহমতে প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট যেখানে মামলা করেছিলো, তারা বলে দিয়েছে এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি। আমি কথা দিয়েছিলাম, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু বানাবো। আপনাদের দোয়ায় সেই পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থায়নে করে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ আসলে মানুষ শান্তিতে থাকে। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সেই ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। কারণ আমি গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দেইনি। খালেদা জিয়া দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলো।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। ওই লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী, এতিমের টাকা যারা লুটে খায় তাদের স্থান বাংলার মাটিতে হবে না। তারা ক্ষমতায় আসা মনেই দেশকে ধ্বংস করে দেয়া। তাই একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নয়ন হয়। নিশ্চয় আপনারা সেটা নিজেরাই দেখেছেন। আজকে ৯ বছরে দেশকে আমরা উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে গেছি, সেই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজকে উন্নয়নশীল দেশ। আমরা বলি স্বল্প উন্নত দেশ, যেটা জাতির পিতা অর্জন করে দিয়েছিলেন। এখন আমরা এক ধাপ উপরে উঠবো। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। আমাদের এই অঞ্চলে সমস্ত দেশগুলো এখন উন্নয়নশীল। আমরাও ওই স্বল্প উন্নত দেশ আর থাকবে না। বাংলাদেশ আর স্বল্প থাকবে না, নিম্ন থাকবে না। বাংলাদেশ আরও একধাপ এগিয়ে যাবে। ইনশাল্লাহ মার্চ মাস থেকে এটা শুরু হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আমরা যেভাবে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছি, বাংলাদেশ ক্ষুধা মুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবো।
Advertisement
বরিশালবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। ৩৯টি প্রকল্প উদ্বোধন করেছি, বিভিন্ন উপজেলায় ৩৩টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছি। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন, জনগণের কল্যাণ। আওয়ামী লীগ মানে দেশ এগিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আহ্বান জানাই, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন, আমরা উন্নয়ন করেছি। এ বছরের ডিসেম্বরে আবার নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে আপনাদের কাছে আমার আকুল আবেদন থাকবে উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরকে জয়যুক্ত করবেন। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি আপনাদের কাছে ওয়াদা চাই। আমার তো চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। বাবা-মা সব হারিয়ে, সেই শোক-ব্যাথা বুকে নিয়েও আমি কাজ করে যাচ্ছি। কাদের জন্য? বাংলার মানুষের জন্য। কারণ এই মানুষের জন্যই আমার বাবা জীবন দিয়েছেন। আমার মা জীবন দিয়েছেন, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন। আমি শুধু চাই যে বাংলাদেশের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, যে বাংলাদেশের জন্য আমি সব স্বজন হারিয়েছি, স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েও আজকে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি শুধু একটাই কারণে, বাংলাদেশকে যেন আমার বাবার স্বপ্নের ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র্য মুক্ত সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারি। তাই আপনাদের সাহায্য, আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের মাঝে আমি ফিরে পেয়েছি আমার হারানো বাবার স্নেহ, হারানো মায়ের স্নেহ, হারানো ভাইয়ের স্নেহ। তাই আজ আপনাদের কাছে আমি ওয়াদা চাই। আপনারা ওয়াদা করেন আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশকে সুস্থ ও শান্তিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে চাই। এই বরিশাল বিভাগ সব সময় অবহেলিত ছিলো। ভোলায় গ্যাস পাওয়া গেছে, সেই গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে বরিশালে দেব। যাতে কলকারখানা গড়ে ওঠে। ভোলার গ্যাস খামাখা নিবো না, ভোলাকেও কিছু দিচ্ছি। সেখানে পাওয়ার প্ল্যান্ট করে দেবো। আর বরিশাল থেকে ভোলায় যাতে যাওয়া যায়, সে জন্য আমরা সেখানে নদীর উপর সেতুও নির্মাণ করে দেবো।
তিনি বলেন, আমরা দেশের উন্নয়নে বিশ্বাস করি, মানুষের কল্যাণে বিশ্বাস করি। বিএনপি কি করেছে আপনারা বলেন? ২০১৫ সাল আপনাদের মনে আছে, ওই খালেদা জিয়া তার অফিসে বসে বললো, আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত না করে সে ঘরে ফিরবে না। আর আগুন দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পোড়ালো। পাঁচশো’র কাছাকাছি মানুষ ২০১৩-১৪-১৫ সালে পুড়িয়ে হত্যা করেছিলো। তিন হাজারের উপর মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আহত করেছে। আর লুটপাট, দুর্নীতি। আজকে তিনি কোথায়? মানুষের উপর অত্যাচার করলে আল্লাহর আরশ কেঁপে যায়। যারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তার বিচার এমনি হয়। সেই বিচারই হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই মানুষের উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ। আজকে নব্বইভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাবে। দেশের একটা ঘরও অন্ধকার থাকবে না, প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎতের আলো দেবো। সেই ভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের লক্ষ্য এ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। ওয়াদা দিয়েছিলাম যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবো, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। ১৫ আগস্টের খুনিদের বিচার করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করেছি।
অন্যায়কে আমরা কখনো প্রশ্রয় দেই না। এ সময় বরিশালবাসীর সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।
জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ প্রমুখ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয় বরিশাল। সমাবেশস্থল বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ পুরো নগরী সাজানো হয় নতুন সাজে। প্রবেশ দ্বারসহ শহরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয় শত শত তোরণ।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে বরিশালে স্বাগত জানানো হয় বঙ্গবন্ধুকে কন্যাকে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই বরিশালের ছয় জেলাসহ আশপাশের এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জনসভায় আসতে শুরু করে। বিভিন্ন স্থান থেকে লঞ্চ, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শহরে আসেন তারা। এ সময় ঢাক-ঢোল ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে উল্লসিত নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। মাথায় ফিতা ও হাতে বিভিন্ন ধরনের ব্যানার ফেস্টুনে ‘শেখ হাসিনার আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, শেখ হাসিনা সংসদে আমরা আছি রাজপথে, শেখ হাসিনার ভয় নাই রাজপথ ছাড়ি নাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। দুপুরের আগে জনসমাবেশস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সমাবেশ শুরু হওয়ার পরে জনতার ঢল সমাবেশ মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় বিস্তৃত হয়। এছাড়া বরিশাল শহরের প্রত্যেকটি অলিগলিতেও তখন ছিল মানুষের উপস্থিতি।
এইউএ/এএইচ/জেআইএম