রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক সিনিয়র সহকারী সচিবের জীবন সংকটাপন্ন হওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চার সদস্যের একটি তদন্ত টিম আগামীকাল (বুধবার) স্কয়ার হাসপাতাল পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
Advertisement
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালে সচিব নজরুল ইসলামকে কি ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখবে তদন্ত কমিটি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, তার নির্দেশে অধিদফতরের উপ-পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. খলিলুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-৪) ডা. মো.আমিনুল ইসলাম, (মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড ক্লিনিক) মেডিকেল অফিসার ডা. মেহেদি হাসান তমাল ও হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্টের মেডিকেল অফিসার ডা. শাহ আলম সিদ্দিকী।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তার ভুল চিকিৎসার তদন্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গড়িমসি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে! প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গত ১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বপ্রণোদিত হয়ে একজন যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন ও জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের হাকডাক দিলেও বাস্তবে ছয়দিনেও তদন্ত কার্যক্রম শুরুই হয়নি। যা খুবই হতাশাজনক।
Advertisement
তারা জানান, ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়া ৩০তম বিসিএস ক্যাডার প্রশাসনের কর্মকর্তা বর্তমানে সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনে কর্মরত নজরুল ইসলাম বর্তমানে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির একাধিক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তদন্ত কমিটিতে নাম থাকলেও গত ছয়দিনে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা কবে তদন্তে যাবেন তাও জানানো হয়নি।
জানা গেছে, নজরুল ইসলামের পিত্তনালিতে পাথর ছিল। এটি অপসারণের জন্য গত ১৭ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আরফিনের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন। ভর্তির পর ডা. আরফিন জানান, পাথর অপসারণে নজরুলের শরীরে ‘ইআরসিপি’ করতে হবে। যদিও তিনি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক, তারপরও সব দায়িত্ব তিনি নেন। তার সিদ্ধান্তে ১৮ জানুয়ারি নজরুলের পিত্তনালির পাথর ইআরসিপি’র মাধ্যমে বের করা হয়। পরে তাকে কেবিনে নেয়া হয়।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী মৌরি গণমাধ্যমকে জানান, কেবিনে নেয়ার পর থেকে নজরুলের অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তিনি বিষয়টি ডা. আরফিন এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। একপর্যায়ে রোগীর চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে ওঠে এবং রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এমনকি তার প্রেসার খারাপের দিকে মোড় নেয়।
Advertisement
২১ জানুয়ারি রোগীর কী হয়েছে জানতে পীড়াপীড়ি করলে ডা. আরফিন বলেন, এ ধরনের চিকিৎসা কনজারভেটিভ ওয়েতে হয়। তাই কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাহলে রোগীর শরীর এত খারাপ কেন হচ্ছে, জানতে চাইলে আরফিন বলেন, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের শরীরের অন্য কোনো জায়গা হয়তো কেটে যেতে পারে। যে কোনো অপারেশনে এটা হয়ে থাকে।
তিনি জানান, অবস্থা আরও খারাপ হতে থাকলে ২২ জানুয়ারি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. সানোয়ার হোসেন রোগীকে দেখতে আসেন। কিন্তু তিনি কিছু শুনলেও কোনো মন্তব্য করেননি। একপর্যায়ে নজরুল ইসলামের স্বজনদের চাপের মুখে পার্শ্ববর্তী বিআরবি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. মোহাম্মদ আলীকে অন কলে আনা হয়। তিনি রোগীকে পর্যবেক্ষণ করেই বুঝতে পারেন যে, ইআরসিপি করার সময় নজরুলের ডিওরেনাম (পাকস্থলীর ঠিক নিচে ক্ষুদ্রান্তের প্রথম অংশ) কেটে গেছে।
এমন অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডা. আরফিন নজরুলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান। তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। পরে ২৩ জানুয়ারি তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে নেয়া হয়। চিকিৎসকদের অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন । গত বুধবার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়।
এ অভিযোগের তদন্তে ১ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা) যুগ্মসচিব মো. সাইফুল্লাহিল আজিমকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্য হলেন- স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এএইচএম রওশন ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১/২) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
গত (বৃহস্পতিবার) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের (বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-২ শাখা) সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। গঠিত কমিটিকে জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রেরণের অনুরোধ করা হয়। একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ তদন্ত কমিটি গঠিত হয়।
এমইউ/জেএইচ/আইআই