শিক্ষা

চা দিতে দেরি করায় মন্ত্রীর পিএসের বোনের ‘লঙ্কাকাণ্ড’

অফিস সহকারী চা দিতে দেরি করায় লঙ্কাকাণ্ড ঘটালেন শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত সচিব নাজুমল হক খানের (পিএস) বোন সহকারী অধ্যাপক ড. তৌফিকা আক্তার। প্রতিবাদ করায় অফিস সহকারীসহ উচ্চপর্যায়ের আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে পিটিয়েছেন। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগীরা।

Advertisement

বুধবার সকালে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ১১তলায় এ ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ মিলেছে। অভিযুক্ত তৈফিকা আক্তার এনসিটিবি’র কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ পদে কর্মরত। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তৌফিকাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে।

বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে এনসিটিবি প্রধান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, তদন্ত করে ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ ড. তৌফিকা আক্তার সকালে অফিসে এসে পিয়নকে চা দিতে বলেন। দেরি হওয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে চিৎকার শুরু করেন। এ সময়ে আরেক কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন তৌফিকাকে থামতে অনুরোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে পানির গ্লাস ছুড়ে মারেন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিনের দিকে। এর প্রতিবাদ করলে তাকে জুতা খুলে পেটানো শুরু করেন। তাকে রক্ষায় ছুটে আসেন কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ গৌতম রায়। তার ওপরও হামলা করেন তৌফিকা। রুমের কাচের দরজা পিটিয়ে ভেঙে ফেলেন। কাচের টুকরা পরে গৌতম রায়ের ডান হাত ও পায়ে গুরুতর জখম হয়।

Advertisement

এ সময় তৌফিকার হামলা থেকে বাঁচতে ড. সৈয়দ শাহজাহান আহমেদ, মো. কবির ও ড. সালমা জোহরা সরে যান। তাদেরও মারধর ও অশ্লীল ভাষায় গালি দেন তৌফিকা। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

কর্মকর্তারা আরও জানান, চিৎকার শুনে ছুটে আসেন এনসিটিবি সদস্য (কারিকুলাম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান। তিনি তৌফিকাকে থামতে ব্যর্থ হন। পরে মতিঝিল থানায় পুলিশকে খবর দেন। এনসিবিটির আরেক সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. মিয়া ইনামুল হক রতন সিদ্দিকী তাকে বাসায় চলে যেতে বলেল তিনি যাননি। পরে দুই নারী পুলিশ এসে তৌফিকাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।

এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তা জানান, গত তিন বছর ধরে ড. তৌফিকা অফিসের সবার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। এর আগেও এনসিটিবির এক অধ্যাপককে মেরেছেন তিনি। ওই সময়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রুহি রহমান ঘটনাস্থলে গিয়ে সত্যতাও পেয়েছিলেন। তাকে অনত্র্য বদলিসহ ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু তৌফিকার ভাই শিক্ষামন্ত্রীর একান্ত কর্মকর্তা হওয়ায় পদে বহাল থাকেন। তাকে কোনো দায়িত্ব দিলেও তা পালন করতেন না। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিতেন। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। ঘটনার পরই এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা ছুটে যান মন্ত্রণালয়ে। তিনি বিষয়টি মন্ত্রীকে জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, চাকরি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে তৌফিকে ওএসডি করেছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Advertisement

এমএইচএম/জেএইচ/আইআই