নীলফামারীর ডিমলায় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ডিমলা শাখার ম্যানেজারের বিরুদ্ধে ঋণ প্রদানে অনিয়ম ও উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
একইসঙ্গে ঋণ গৃহীতার টাকা তুলে নিজেই আত্মসাৎ করেন ওই ম্যানেজার। ঘুষ না দিলে কৃষকের মিলছে না ঋণ। দালালের মাধ্যমে শাখাটি পরিচালনা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলা সদরের বাবুরহাট গ্রামের গোলাম রব্বানীর ছেলে মাজহারুল ইসলাম ২০১১ সালের ১০ মার্চ রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ডিমলা শাখা থেকে গাভিপালন বাবদ (প্রকল্প নং-২৯) ঋণ গ্রহণ করেন।
ঋণ গ্রহণের পর থেকে তিনি নিয়মিত ব্যাংকটিকে মুনাফা দিয়ে আসছিলেন। পুরাতন ঋণ পরিশোধ ও হালনাগাদ করে নতুন ঋণ গ্রহণের জন্য ডিমলা কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
Advertisement
ম্যানেজার পঙ্কজ তাকে নতুন ঋণ গ্রহণের জন্য আগের কাগজের সঙ্গে আরও কিছু নতুন কাগজপত্র দিতে বলেন। ঋণ গ্রহীতা মাজহারুল নতুন করে যাবতীয় কাগজপত্র ম্যানেজারের কাছে জমা দেন।
কাগজপত্র বুঝে নেয়ার পর ম্যানেজার ওই ঋণ বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা করে দেবেন মর্মে জানান। তবে এ ঋণের নথি অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ১ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হবে বলে জানান ম্যানেজার।
ঋণ গ্রহীতা মাজহারুলের টাকার বিশেষ প্রয়োজন হওয়ায় ম্যানেজারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে উৎকোচ বাবদ অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে ম্যানেজারের কথামতো মাজহারুল গত ৯ জানুয়ারি ওই ব্যাংকের ঋণের সমুদয় পাওনা বাবদ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯২০ টাকা ও সার্ভিস চার্জ বাবদ ৮৬৩ টাকা জমা রশিদের মাধ্যমে পরিশোধ করেন।
ব্যাংকের সমুদয় পাওনা পরিশোধের পর ম্যানেজার উৎকোচের বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য তাকে চাপ সৃষ্টি করেন। কিন্তু টাকা না দিতে পারায় মাজহারুল ম্যানেজারকে জানান, নতুন ঋণের টাকা তুলেই আগে ঘুষের বাকি ৫০ হাজার টাকা দেয়া হবে।
Advertisement
গত ১০ জানুয়ারি সকালে ম্যানেজার ঋণ গ্রহণের যাবতীয় কাগজপত্রে মাজহারুল ও তার স্ত্রী মুক্তা আক্তারের স্বাক্ষর করে নেন। সেদিনই বিকেলে নতুন ঋণের টাকা গ্রহণের জন্য মাজহারুলকে ব্যাংকে ডেকে নেন ম্যানেজার।
ঋন গ্রহীতা ব্যাংকে আসলে ম্যানেজার জানান, তার ঋণ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ না করে ৩ লাখ টাকা অনুমোদন করেছেন। ঋণ গ্রহীতা তার ঋণের টাকা চাইতে গেলে ম্যানেজার উৎকোচের বাকি ৫০ হাজার টাকার দাবি করেন।
এ নিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে মাজহারুলের বাক-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে ব্যাংক থেকে ঋণের টাকা না নিয়েই চলে আসেন মাজহারুল। পরবর্তীতে মাজহারুল জানতে পারেন, ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার সরকার ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে ঋণের ৩ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় দেড় লাখ নিজেই উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। ঋণের বাকি টাকা ঋণ গ্রহীতার সিসি হিসাব নম্বরে জমা দেন।
পরবর্তীতে ঋণ গ্রহীতা ম্যানেজারের কাছে টাকার জন্য ব্যাংকে গেলে উৎকোচের বাকি ৫০ টাকা না দিলে ঋণের টাকা দেবেন না বলে জানান। ঋণ গ্রহীতা মাজহারুল নতুন মঞ্জুরিকৃত ঋণের টাকা না পেয়ে ওই ব্যাংক ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঋণ গ্রহীতা জাগো নিউজকে বলেন, রাকাব ডিমলা শাখাটি একটি দালাল চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে। ঋণ নিতে গেলে ম্যানেজার আগে কাগজপত্র দেখার নামে তার সঙ্গে যোগযোগ করতে বলেন। বিষয়টি ফাঁস করলে ঋণ দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ডিমলা শাখার ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার সরকার জাগো নিউজকে বলেন, মাজহারুল ইসলামের ঋণ প্রদানে আমি উৎকোচ নিইনি। তবে তার কাছে আমার কিছু টাকা পাওনা থাকায় মূল ঋণ থেকে ওই টাকা কর্তন করে বাকি টাকা তার সিসি হিসাব নম্বরে জমা দিয়েছি।
ওই ঋণ গ্রহীতার কত টাকা ঋণ অনুমোদন হয়েছে জানতে চাইলে ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার সরকার বলেন, এটি বলা যাবে না। বিষয়টি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক নীলফামারীর আঞ্চলিক জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আমিনুল হক জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জাহেদুল ইসলাম জাহিদ/এএম/জেআইএম