শঙ্কিত নন, তবে ভিতরে খানিক চিন্তা বাসা বেঁধেছে মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর। এ চিন্তা জিম্বাবুয়েকে নিয়ে নয় বাংলাদেশের চার বছরের কোচ চন্ডিকা হাথুুরুসিংহের কোচিংয়ে আসা লঙ্কানদের নিয়েও ভাবনা নেই তেমন। প্রধান নির্বাচকের যত চিন্তা এখন 'শীত'।
Advertisement
মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর উপলব্ধি, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে যেভাবে শীত জেঁকে বসেছে, তাতে ঘরেও মাঠে পরিবেশ-পরিস্থিতি শতভাগ অনুকূল ভাবার উপায় নেই।
জাগো নিউজের সাথে আজ রাতে আলাপে নান্নুর সোজা-সাপ্টা উচ্চারণ, আমাদের ক্রিকেটাররা দেশের মাটিতে চেনাজানা পরিবেশ, স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকের সামনে খেলে। সব কিছু মিলে অনুকূল পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে ও খেলে অভ্যস্ত। তবে এবার প্রচন্ড শীত পড়েছে, তাতে পরিবেশ-পরিস্থিতি শতভাগ অনুকূল থাকবে, এমন ভাবা বোধ করি ঠিক হবে না এমন প্রচন্ড শীত, ঘন কুয়াশ, কনকনে বাতাস আর ভেজা আবহাওয়া-যে কোনো দলের ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে বাধা।
প্রধান নির্বাচকের কথায় বোঝা গেল-এমন শীত, কুয়াশা, কনকনে বাতাস আর ভেজা আবহাওয়া তাদের দল সাজানো এবং কৌশল নির্ধারণেও খানিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Advertisement
সবার জানা ঘরের মাঠে খানিক স্লো ও লো উইকেট টাইগারদের জন্য ‘পয়োমন্ত।’এ ধরনের পিচে ব্যাটিংটা যতটা সম্ভব সমৃদ্ধ ও লম্বা করার পাশাপাশি এক গাদা স্পিনার নিয়ে খেলার রেকর্ডই বেশি টাইগারদের। বেশির ভাগ সাফল্যও অমন ধরনের উইকেটে। কিন্তু এখন যে হিমশীতল কুয়াশা ঘেরা আবহাওয়া, তাতে স্পিন নির্ভরতায় আছে বড় ধরনের ঝুঁকি।
কারণ কুয়াশায় ময়েশ্চার সৃষ্টি হবে, সঙ্গে শিশির। এমন উইকেটে স্পিন নির্ভরতায় থাকবে বড় ধরনের ঝুঁকি। বরং এমন শীত, কুয়াশা আর ভেজা আবহাওয়া থাকলে সেটা হবে সিমিং কন্ডিশন। মানে পেস ফ্রেন্ডলি উইকেট। সেখানে বাড়তি স্পিনার নিয়ে মাঠে নামার অর্থ বিপদ ডেকে আনা।
যতদূর জানা গেছে, পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় এনেই দল সাজানোর চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। তবে এটা ধরেই নেয়া যেতে পারে, সামনের যে ক'টা দিন আছে, তাতে শীতের প্রকোপ না কমলে একাদশে বাড়তি স্পিনার অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা শুন্যের কোঠায়।
তাই প্রধান নির্বাচক আগামীকালের আবহাওয়া এবং প্র্যাকটিস সেশনকে খুব গুরুত্ব দিতে চান। তার কথা, শনিবারের আবহাওয়া দেখে একাদশ সাজানোর চূড়ান্ত রুপ রেখা তৈরি করবো আমরা।
Advertisement
শীতের তীব্রতা আর কুয়াশা ভেজা আবহাওয়া ছাড়াও শেরে বাংলায় শীতকালে প্রচুর শিশির পড়ে। বিপিএলে মাঠ ভিজে একাকার। তাই তো শেষ দিকে খেলা এগিয়ে আনা হয়েছিল।
ওই শিশির ভেজা পিচে এবার বাংলাদেশের বোলাররা কর্তৃত্ব করলেও শীর্ষ উইকেট শিকারির বড় অংশই ছিলেন পেস বোলাররা। বাঁ-হাতি সাকিব আল হাসান (সর্বাধীক ২২ উইকেট ) আর লেগস্পিনার শহিদ আফ্রিদী (১৫) ছাড়া উইকেট শিকারিদের সেরা তালিকায় ছিলেন সব পেসার- আবু জাইদ রাহি (১৮), মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন (১৬), হাসান আলী (১৬) মাশরাফি বিন মর্তুজা (১৫) রুবেল হোসেন( ১৫), তাসকিন আহমেদ ( ১৫) ও আবু হায়দার রনি ( ১৫)।
সেই শিশিরের সাথে এবার তিন জাতি আসরে যোগ হয়েছে তীব্র শীত। ঘন কুয়াশা আর কনকনে বাতাস। তাতে হোম কন্ডিশনটাও এবার যেন ‘সিমিং' কন্ডিশনে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের সেই চির চেনা জানা গঠন শৈলি, মানে টিম কম্বিনেশন চিন্তা করাও বোকামির সামিল।
ধরেই নেয়া যায়, আবাহওয়ার অতি নাটকীয় পরিবর্তন না ঘটলে টিম বাংলাদেশের একাদশে স্পিনারদের বদলে পেসারদের আধিক্য থাকবে। ১১ জনে সাকিব ছাড়া সে অর্থে কোনো জেনুইন স্পিনারের অন্তর্ভূক্তির সম্ভাবনা কম। অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ আর বাঁ-হাতি সানজামুলের দলে জায়গা পাওয়া বেশ কঠিনই হবে।
কারণ সিমিং কন্ডিশনে বাড়তি স্পিনার নিয়ে খেলা অর্থহীন। তার চেয়ে বড় কথা, একাদশে সাকিবের পাশে নাসির ও মাহমুদউল্লাহর মত পরীক্ষীত বিকল্প স্পিনার আছেন। সেক্ষেত্রে মাহমুদউল্লাহ আর নাসিরই হবেন ব্যাকআপ স্পিনার। মানে বাঁহাতি অর্থোডক্স সাকিবের ১০ ওভারের সাথে অফস্পিনার মাহমুদউল্লাহ আর নাসিরের ৫+৫ = ১০ ওভার ধরেই গেম প্ল্যান তৈরির সম্ভাবনা বেশি।
নাসির বিপিএলেও বল হাতে ভাল করেছেন। বেশ ক'জন বাঁ-হাতি আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বল হাতে ওপেনও করেছেন। আবার ব্রেক থ্রুও আদায় করেছেন। কাজেই নাসিরের দলে জায়গা একরকম পাকাপোক্ত।
তাই পেসার কোটায় চারজনকে দেখলে অবাক হবেন না! অধিনায়ক মাশরাফির সাথে বাঁ-হাতি মোস্তাফিজ থাকবেন। সঙ্গে সাইফউদ্দীন আর আবুল হাসান রাজুকেই হয়তো দেখা যাবে। দুজনই সুইংয়ের সাথে স্লোয়ারের মিশ্রণ ঘটানোর কৌশল রপ্ত করেছেন।
তাহলে একাদশটা কি দাঁড়ালো? একটু মিলিয়ে নিন-তামিম, বিজয়, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, নাসির, মাশরাফি (অধিনায়ক), সাইফউদ্দীন, মোস্তাফিজ, আবুল হাসান রাজু।
এআরবি/এমএমআর/আইআই