রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে ধারণের মধ্যদিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
Advertisement
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক-এটাই হোক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে সকলের অঙ্গীকার।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ১০ জানুয়ারি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বাঙালি জাতির অবিস্মরণীয় এ দিনে আমি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
Advertisement
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতা হস্তান্তরে অনীহার কারণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে।
আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। মহাকালের মহাকবির এই ভাষণকে ঘিরেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ, জন্মলাভ করে সার্বভৌম রাষ্ট্র। ঐতিহাসিক এ ভাষণকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ‘বিশ্ব ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে, যা বাঙালি জাতির জন্য এক গৌরবময় অর্জন।
তিনি বলেন, মুক্তিসংগ্রামের বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং সর্বস্তরের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওই দিনই পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে তার ৩২ নম্বরের বাসা থেকে গ্রেফতার করে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে আটকে রাখে। মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দিকালীন তার ফাঁসির হুকুম হয়েছিল।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- ‘ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। জয় বাংলা’। দেশ ও জনগণের প্রতি এমন অকৃত্রিম ভালোবাসার উদাহরণ বিশ্বে বিরল। সেখানে বঙ্গবন্ধু ৯ মাস ১৪ দিন কারাভোগ করেন। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলতে থাকে। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রেরণার উৎস। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের পেছনে রয়েছে জাতির পিতার অপরিসীম অবদান। বাঙালির অধিকার আদায়ে তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়।
Advertisement
আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিজয়ীর বেশে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসার মাধ্যমে বাঙালির স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে লাখো জনতার উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন, ‘আমার জীবনের সাধ আজ পূর্ণ হয়েছে। আমার সোনার বাংলা আজ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র’।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন যদি কেউ বাংলাদেশের স্বাধীনতা হরণ করতে চায় তাহলে সে স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মুজিব সর্বপ্রথম তার প্রাণ দেবে’। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধু তার কথা রেখে গেছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে তার আদর্শ মুছে দিতে এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু বাঙালি বীরের জাতি। যতদিন বাংলাদেশ ও বাঙালি থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু সবার অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন।
বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তিও চেয়েছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সে লক্ষ্যে সদ্যস্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের কাজও শুরু করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে অগ্রগতির সে যাত্রাকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে নিরলস প্রয়াস চালাচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং খুব শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্নখাতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে।
এফএইচএস/বিএ