‘১৬ বছরের শিক্ষকতা জীবনে হাজার হাজার ছাত্রকে পড়িয়েছি। কেউ আজ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার। সরকার তাদের বেতন দেয়। অথচ আমরা যারা তাদের গড়েছি তাদের বেতন হচ্ছে না। সরকার আমাদের বিনা বেতনে রেখেছে। দীর্ঘ দিনের এ কষ্ট দেখার কি কেউ নেই’? এভাবেই নিজেদের কষ্টের কথা প্রকাশ করছিলেন রাজধানীর শাহ্ আলী মডেল হাইস্কুলের শিক্ষিকা শাহিন সুলতানা।
Advertisement
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে এমপিওভুক্তির দাবিতে ৭ দিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আন্দোলন চলছে। গতকাল থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে নেমেছেন তারা। আজ আমরণ অনশনের দ্বিতীয় দিন। তবে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কারো কোনো আশ্বাস পাননি আন্দোলনরতরা।
এমপিওভুক্তি, সহকারী শিক্ষকদের মতো বেতন, বাসা ভাড়া ও চিকিৎসা ব্যয় পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্লাকার্ড, ফেস্টুনে ‘মা ভাত দাও’, মা ‘এমপিও চাই’, ‘করুণা নয় নিজেদের অধিকার চাই’ লেখা এমন নানা শ্লোগানে সারাদেশ থেকে সহস্রাধিক শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওকরণের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
আমরণ অনশনে অংশ নেয়া শাহ আলী মডেল হাইস্কুলের শিক্ষিকা শাহিন সুলতানা বলেন, আমরা কী করবো, কার কাছে যাবো? বিনা বেতনে আর কতো দিন? ১৬ বছরেও বেতন হয়নি। ১৬টি বছর বেতন ছাড়াই চাকরি করেছি। অসংখ্য ছাত্র পাশ করে ইঞ্জিনিয়ার-ডাক্তার হয়েছে। অথচ আমাদের দাবি সরকার পূরণ করেনি।
Advertisement
লুৎফা বেগম নামে অপর এক শিক্ষিকা বলেন, ‘আমাদের বেতন-ভাতা প্রাপ্য। এটা চাওয়া তো বেঈমানি নয়? তাহলে আমাদের পরিশ্রমের কি কোনো মূল্য নেই? এখন পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নিলো না এটা কষ্টকর।
ফাউন্ডেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, টানা পাঁচ দিন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আমাদের কেউ আশ্বাস দেয়নি। অনেকে অসুস্থ হয়েছেন। সবাই অর্ধাহার-অনাহারে দিন পার করছেন।
তিনি আরও বলেন, গত পাঁচ দিন ধরে আমাদের খোলা আকাশে নিচে শীতের মধ্যে অনেক কষ্টে রাত পার করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। মানুষ গড়ার কারিগরদের এমন নাজুক অবস্থার পরও সরকার আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় রায় বলেন, 'দেশের ৯৮ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যবস্থাপনা নির্ভর। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ এবং কারিগরি মাদরাসাও রয়েছে। বিভিন্ন স্তরে পাঁচ হাজারের বেশি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির অপেক্ষায় আছে, যা এই স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক-চতুর্থাংশ।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। অথচ তারাই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ লজ্জা কার’?
বিনয় রায় বলেন, আমরা অপেক্ষায় আছি। সরকার আমাদের দিকে চাইবেন, নমনীয় হবেন। আমাদের উদারতা, ভদ্রতাকে দুর্বল ভাবলে ভুল হবে। জীবন যাবে কিন্তু দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এবার ঘরে ফিরব না।
জেইউ/এমএমজেড/এমএস