হাতে নতুন বই, মুখে হাসি উৎসবের আমেজ। নতুন বছরের প্রথম দিনে শীতকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে উপস্থিত হয়েছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা। নাচে গানে বই বিতরণ উৎসব-২০১৮ পালন করছে শিশুরা।
Advertisement
সোমবার সকাল থেকেই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন গ্রুপ দেশাত্মবোধকসহ নানা গানে মেতে উঠেছে। প্রত্যেকের মুখে আনন্দের ছাপ। এ দিন সকালে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় মন্ত্রী কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেন।
উদ্বোধনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছরের মতো এই দিনটা সবার কাছেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক শিক্ষা সব শিক্ষার মেরুদণ্ড। বর্তমানে মোট ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। ৫০ হাজার বিদ্যালয়ে নতুন করে ল্যাপটপ, মডেম ও মাল্টিমিডিয়া দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সবার জন্য উপবৃত্তির দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। এখন সব শিশুরাই স্কুলে যাচ্ছে। তাদের বিস্কুট দেয়া হচ্ছে। তবে আমি মনে করি বাবা-মা’রা শুধুমাত্র এসব কারণে এখন আর শিশুদের স্কুলে পাঠান না। তারা সন্তানদের দেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান তাই স্কুলে পাঠান।
Advertisement
এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির উপস্থাপক হানিফ সংকেত বলেন, আজকের দিনটা তোমাদের জন্য সত্যিই খুব আনন্দের। আমাদের সময় বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে হাতে বই পাওয়ার কথা আমরা চিন্তাই করতে পারতাম না। তোমরা শুধু বই নিলে চলবে না। বই পড়ে জীবনকে আলকিত করতে হবে। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইও পড়তে হবে।
উৎসবে আসা আইডিয়াল সরকারি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোতাহের হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, খুব আনন্দ লাগছে। প্রতি বছর প্রথম দিনে বই পেয়েই বাংলার ২-৩ টা গল্প পড়ে ফেলি। নতুন বইয়ে গল্প পড়তে ভালো লাগে। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারিয়াল সাবা বলেন, প্রতি বছর প্রথম দিনে বই পেতে ভালো লাগে। আজকে পড়াশুনা শুরু করবো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মোতাহার হোসেন। এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের দুই কোটি ৪৯ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৩ শিক্ষার্থীকে চার রঙের ১০ কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৮০টি নতুন বই বিতরণ করা হবে। প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩৪ লাখ ১১ হাজার ৮২৪টি ‘আমার বই’ ও অনুশীলন খাতা বিতরণ করা হবে। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো ও সাদরী এই পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষার প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির ৩৪ হাজার ৬৪২টি ‘আমার বই’ ও অনুশীলন খাতা দেয়া হবে। এছাড়া উল্লিখিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রথম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের মোট ৭৯ হাজার ৯৯২টি বই বিতরণ করা হবে।
Advertisement
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) স্তরের এক কোটি ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩ জন শিক্ষার্থীকে এবার বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক দেয়া হবে। ১১৪টি বিষয়ের ১৭ কোটি ৮৯ লাখ ২৩ হাজার ৭৩৩টি বই ছাপানো হয়েছে। এছাড়া ইবতেদায়ি ও দাখিলের ৫৪ লাখ ৩ হাজার ৪৬৯ শিক্ষার্থীকে ১২৪টি বিষয়ের পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৯টি বই দেয়া হবে। অন্ধদের জন্য এবারও ব্রেইল পদ্ধতির আট হাজার ৪০৫টি বই ছাপানো হয়েছে।
এআর/এআরএস/জেআইএম