বছরজুড়েই বরেন্দ্রখ্যাত রাজশাহী অঞ্চলে তৎপর ছিল জঙ্গিরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানে কোণঠাসা হয়ে এ অঞ্চলের প্রত্যন্ত ও জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় গড়ে তোলে নিরাপদ আস্তানা।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ অঞ্চল ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় সহজেই দেশত্যাগের সুযোগ মিলত। এছাড়া দুর্বল গোয়েন্দা নজরদারিকে কাজে লাগিয়ে আস্তানা গড়েছে জঙ্গিরা। ভারত থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনেছে। প্রত্যন্ত ও জনবিচ্ছিন্ন হওয়ায় গোপন কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ চালিয়েছে সহজেই।
তবে থেমে থাকেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। আস্তানায় আস্তানায় চিরুনী অভিযান চালিয়ে জঙ্গি তৎপরতা রুখে দিয়েছে। এ বছর রাজশাহী অঞ্চলে তিনটি বড় ধরনের জঙ্গিবিরোধী অপারেশন পরিচালনা করেছে পুলিশ। এসব অভিযানে মারা গেছেন ১২ জন। গ্রেফতার হয়েছে অন্তত অর্ধশত জঙ্গি। সর্বশেষ গত রোববার ভোররাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আলাদা অভিযানে জেএমবির তিন গায়রে এহসার সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
তবে এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শীর্ষ জঙ্গিনেতা শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদ ও মাইনুল ইসলাম ওরফে মুসা। এ দুজনকে পলাতক জঙ্গিদের মধ্যে মোস্টওয়ান্টেড বলছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। তাদের অবস্থান নিয়ে এখনও ধোয়াশায় গোয়েন্দারা।
Advertisement
গোয়েন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা রাজশাহী অঞ্চলের অন্তত ১০ জঙ্গি নেতার নাগালই পাচ্ছে না আইন-শৃংখলা বাহিনী। এসব জঙ্গি দেশে, নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে সে সম্পর্কেও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। তবে সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে দুর্ধর্ষ জঙ্গি সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা সোহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, গেল ২৬ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অপারেশন ঈগল হান্ট ও ১১ মে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে অপারেশন সানডেভিলে নিহত হয় দুই নারীসহ নয় জঙ্গি। এই অভিযানে জঙ্গিদের হামলায় দমকল বাহিনীর এক কর্মীও মারা যান।
আর তানোরে ১১ জুন অপারেশনে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে নারীসহ অন্তত ১১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কাছাকাছি সময়ে এই তিন অপারেশনে স্বস্তি ছিল বেশ কিছুদিন। কিন্তু বছরের শেষে এসে গত ২৮ নভেম্বর পদ্মার দুর্গম চর আলাতুলিতে আরেকটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র্যাব। সেখানে নিহত হয় তিন জঙ্গি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছেই এমন জঙ্গি আস্তানা পাওয়ার ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। খোদ আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারাই এখন বলছেন, ভারতে অবৈধ যাতাযাতের সুযোগ থাকায় এ অঞ্চলে জঙ্গিদের ঘাপটি মেরে থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
Advertisement
কয়েক মাস আগে রাষ্ট্রীয় একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরছে। রাজশাহী অঞ্চলকে ঘিরেই ফের আস্তানা গড়ার চেষ্টায় আছেন তারা। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তবর্তী হওয়ায় ‘সহজেই দেশ ছাড়ার সুযোগ’ কাজে লাগানোর ধারণা থেকে জঙ্গিরা এ অঞ্চলকে বেছে নিতে পারে।
জানতে চাইলে র্যাব-৫ এর মেজর এএম আশরাফুল ইসলাম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতুলির জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর এখন সীমান্ত এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। চরাঞ্চলে অচেনা ব্যক্তির আনাগোনা রয়েছে কি না তা জানার চেষ্টা করছেন তারা। পাশাপাশি গ্রামবাসীকে অনুরোধ করা হচ্ছে পরিস্থিতি সন্দেহজনক মনে হলে র্যাবকে তথ্য দেয়ার।
এ বিষয়ে পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জঙ্গিরা শহরাঞ্চল ছেড়ে এখন গ্রাম কিংবা দুর্গম চরকেই বেছে নিচ্ছে। তবে আইন-শৃংখলা বাহিনীর অভিযানের কারণে তারা সুবিধা করতে পারছে না। এ বছরের মাঝামাঝিতে তালিকা দেখে দেখে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্তত অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহাবুবুল আলম জানান, রাজশাহী অঞ্চলে জঙ্গিদের তৎপরতা রয়েছে। এ অঞ্চলে শুধু জঙ্গিই নয়, জঙ্গিবাদে অর্থের যোগানদাতাও রয়েছে। এ বছর রাজশাহীর এমন দুজনকে আইনের আওতায় এনেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। জঙ্গি কার্যক্রম দমনে র্যাব সব সময় সক্রিয়ভাবে কাজ করে চলেছে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আরআইপি