জাতীয়

জেলা-উপজেলায় চাকরি ভালো না লাগলে ছেড়ে দেন : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জেলা বা উপজেলা হাসপাতালে নিয়োগ পেয়ে যেসব চিকিৎসক সেখানে যান না, তাদের আর সুযোগ দেয়া হবে না। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Advertisement

তিনি চিকিৎসকদের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, সরকারি চাকরি যদি কারও ভালো না লাগে, তাহলে তা ছেড়ে ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন।

বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের অর্থ দ্বারা সংগৃহীত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মফস্বল শহর থেকে ঢাকায় আসার ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চিকিৎসকদের একাধিকবার হুঁশিয়ারি দিলেও চিকিৎসকদের আচরণে পরিবর্তন আনতে পারেননি।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে ডাক্তারকে আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, যেই আমরা পাঠাচ্ছি উপজেলায়, সেখানে না থেকেই চলে আসে। সরকারি চাকরি হলেই এই সমস্যাটা হয়। যেই আমরা নিয়োগ দিচ্ছি, যেকোনোভাবে কায়দা করে ঢাকায় এসে বসে থাকে।

তিনি বলেন, এভাবে যদি কেউ চলে আসে তাহলে তার তো চাকরি করার দরকার নেই। ঢাকায় বসে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করলেই তো অনেক টাকা পাবে। তাহলে তারা বাড়ি চলে যাক, আমরা নতুন করে নিয়োগ দেব।

আগের সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে চিকিৎসা পেলে সবাই নৌকায় ভোট দেবে, আমাদের (বিএনপি-জামায়াত) কেউ ভোট দেবে না- এই কথাটা বলে (কমিউনিটি ক্লিনিক) বন্ধ করে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, এ রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারে কেউ, এটা চিন্তাও করা যায় না। কেবল এই একটা ব্যাপারে না, আরও বহু ব্যাপারে এই রকম আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বিএনপি-জামায়াত নিয়ে গেছে, যার জন্য আমাদের অনেক খেসারতও দিতে হয়েছে। এ কারণে পারমানেন্ট একটা সলিউশন মনে হয় এমনভাবে করে দেয়া, যাতে আর কেউ এটা বন্ধ করতে না পারে, সেভাবে এটা করা ভালো।

Advertisement

অ্যাম্বুলেন্স মেরামতেও তহবিল চান প্রধানমন্ত্রীসরকারি টাকা বরাদ্দের দীর্ঘসূত্রিতা নিয়েও সচেতন প্রধানমন্ত্রী। এ কারণে অ্যাম্বুলেন্সের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ যেন তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারে- এমন একটি উদ্যোগ চান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের একটা চাকা যদি নষ্ট হয়, সে চাকার জন্য সরকারি টাকার আবেদন করে আনতে আনতে চার চাকাই নষ্ট হয়ে যায়, অথবা অ্যাম্বুলেন্সটাই বসে যায়।

এই সমস্যার সমাধানটাও বাতলে দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অ্যাম্বুলেন্স তো কিছু কামাইও করে। অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী আনলে তো সে কিছু ভাড়াও পায়। সেখানে আমার মনে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার, অথবা একটা ফান্ড করা দরকার যেখান থেকে যদি কখনও কিছু একটা নষ্ট হলে অথবা সামান্য একটু খারাপ হলে দ্রুত মেরামত করা যেতে পারে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে খরচ করবে, তারপর বিল দেবে, তারপর টাকাটা পাবে।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে চিন্তা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি অ্যাম্বুলেন্স কিন্তু দিয়েই যাচ্ছি, এর আগেও চারশ-পাঁচশ অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি। যখনই সরকারে আসছি, তখনই দিচ্ছি। এত তাড়াতাড়ি এগুলো তো নষ্ট হওয়ার কথা না।

বিদেশি চিকিৎসকদের দেশে কাজ করার সুযোগ জরুরিদেশের চিকিৎসা সেবা উন্নত করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেশে কাজ করার সুযোগ তৈরির পক্ষে প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরকে যদি সুযোগ দেয়া যায় বা তারা যদি এখানে এসে কিছুদিন কাজ করে যায় তাহলে আমাদের চিকিৎসকরা তাদের সঙ্গে কাজ করলে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন। তাহলে আমাদের রোগীদের আর বিদেশ যেতে হয় না, বিদেশের চিকিৎসাটা তারা এখানে বসেই পেতে পারে। সে জন্য অনেক ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর আগে সতর্ক থাকতে হবেগত কয়েক বছর ধরেই কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিশুদের অসুস্থ হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা শিশুদের প্রাণ রক্ষা করতে পারে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এই কাজ করে তাদেরকে বলে দেবেন যে, কোনো শিশুকে ওষুধ খাওয়ানোর আগে তার পেট যেন খালি না থাকে, তাদেরকে যেন খাবার দেয়া হয়।

অনেক সময় কৃমির ওষুধ খেলে বমি হয় বা অন্য কোনো অসুবিধা হয়। সেটা হয় যদি খালি পেটে সে ওষুধ খায়। তাদের সব সময় ভরা পেটে খাওয়ার ব্যবস্থাটা করা উচিত। তিনি বলেন, আপনারা ওষুধ খাওয়ানোর পরে নাস্তাটা দেন। এটা আগে দিলেই তো ভালো হয়, তাহলে ঝামেলাটা আর হয় না।

এফএইচএস/এমবিআর/এনএফ/আরআইপি