দেশজুড়ে

বিদ্যুতের তারের ঝুঁকিতে লক্ষাধিক মানুষ

আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকের বিদ্যুতের তার কাঁচাবাঁশ ও কলাগাছ ঘেঁষে ঝুলে রয়েছে। একই সঙ্গে মাটিতেও পরে রয়েছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ স্থানটির পাশ দিয়ে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে প্রতিদিন চলাচল করে লক্ষাধিকেরও বেশি মানুষ।

Advertisement

ফলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের গারানাটা গ্রামের এ স্থানটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। পলাশবাড়ী পিডিবির কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে মানুষের জীবন। দ্রুত বিষয়টির সমাধান না করলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় সুধী সমাজ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গারানাটা গ্রামের একটি রাইসমিলে বিদ্যুতের সংযোগ প্রয়োজন হলে পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে পিডিবির বৈদ্যুতিক খুঁটির সাহায্যে তার টেনে আনা হয়। পরে সেই বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে আশপাশের মানুষ তাদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তার টেনে বিদ্যুতের সংযোগ নেন। কিন্তু অনিরাপদভাবে এসব সংযোগ নেয়া হলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউই নেই। ঝুঁলে থাকা এসব তারের পাশ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ চলাচল করছেন। ফলে সচেতন মানুষগুলো বিপাকে পড়েছেন।

সরেজমিনে গাইবান্ধা জেলা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে গারানাটা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে আসা বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটি পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কের পাশে গারানাটা গ্রামে গিয়ে শেষ হয়েছে। পরে সেখান থেকে স্থানীয় দুই শতাধিকেরও বেশি আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহক বাঁশের খুঁটির সাহায্যে তার টেনে নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছেন বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এসব বাঁশের খুঁটি থেকে তার সরে গিয়ে বাঁশ ও কলাগাছের সঙ্গে লেগে রয়েছে।

Advertisement

অনেকেই আবার বৈদ্যুতিক খুঁটি ব্যবহার না করেই বিদ্যুতের সংযোগ নিয়েছেন। ফলে এসব সংযোগের তার ঝুঁকিপূর্ণভাবে ঝুলে রয়েছে এবং মাটিতে পরে রয়েছে। গাইবান্ধা জেলা শহরে প্রবেশের ব্যস্ততম এ সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ওই স্থানে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নিশ্চিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে।

শহরের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা তামজিদুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার গাইবান্ধা থেকে পলাশবাড়ী যাওয়ার পথে গারানাটা গ্রামে মারাত্মকভাবে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারগুলো দেখেছি। সেখানে যদি কোনো সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে সেই দুর্ঘটনায় কেউ প্রাণ না হারালেও এসব বিদ্যুতের তারের কারণে নিশ্চিত প্রাণহানির ঘটনা ঘটবে। তাই অতিদ্রুত বিষয়টির সমাধান দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গারানাটা গ্রামের এক ব্যবসায়ী বলেন, কয়েকবার গ্রামের মানুষদের বিদ্যুতের সংযোগের তারগুলো মেরামত করতে বলা হলেও কেউ তা করছে না। এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরও জানানো হয়েছে। কিন্তু কারও টনক নড়ছে না। বিদ্যুতের তারগুলো কৃষিজমি ও বাড়ির ওপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে নেয়া হয়েছে। যে কোনো সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকেই কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, আমি দেখেছি খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুতের তার দিয়ে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন নেয়া হয়েছে। ওই স্থান দিয়ে চলাচল করা বিপজ্জনক। বিষয়টি পলাশবাড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে জানাব।

Advertisement

পলাশবাড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিতরণ বিভাগ) আবাসিক প্রকৌশলী মো. মাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে জাগো নিউজকে বলেন, এ অবস্থা শুধু এ গ্রামেরই চিত্র নয়। পুরো পলাশবাড়ী উপজেলাতেই ভয়াবহ চিত্র। আমরা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি। খুব তাড়াতাড়ি এ লাইনগুলো ঠিক হবে।

তিনি বলেন, আপনার যদি অ্যাক্সিডেন্টের মতো মনে হয় তাহলে ওই এলাকার একজনকে আমার অফিসে পাঠান। আমার অফিসের একজনের সঙ্গে তিনি আমার গাড়িতেই যাবেন। যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে এজন্য আমার লোকজনও দেখে আমাকে রিপোর্ট করুক আসলে কী অবস্থা ওখানকার।

বিষয়টি গাইবান্ধা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিতরণ বিভাগ) নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-২) মো. আনোয়ারুল ইসলামকে মুঠোফোনে অবহিত করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি পলাশবাড়ী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিতরণ বিভাগ) আবাসিক প্রকৌশলীকে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলব।

রওশন আলম পাপুল/এমএএস/জেআইএম