উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তিতে নজিরবিহীন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অমান্য করে ও জাতীয় মেধাতালিকাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ভর্তির সময় থাকলেও আজ (রোববার) তড়িঘড়ি করে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করা হয়!
Advertisement
কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সুকৌশলে ‘আগে এলে আগে ভর্তির সুযোগ পাবেন’ ঘোষণা দিয়ে জাতীয় মেধাতালিকায় সিরিয়ালে অনেক পেছনে থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ করে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত টিউশন ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের মাধ্যমে এ সুযোগ করে দেয়া হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নজিরবিহীন অনিয়মের ফাঁদে পড়ে মেধাতালিকার সিরিয়ালে ভর্তির সুযোগ রয়েছে এমন শিক্ষার্থীর মেডিকেলে ভর্তির স্বপ্ন ভেঙে গেছে।
খোঁজ জানা গেছে, এই কলেজে মোট আসন ৯০টি। এর মধ্যে বিভিন্ন কোটায় ১৮টি। আর সাধারণ কোটায় ৭২টি আসন। এ ৭২টি আসনে ভর্তির জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ জাতীয় মেধাতালিকা ক্রমানুসারে ক্রমিক নম্বর ৪০০১ থেকে ৭১৭৮ পর্যন্ত সিরিয়াল বেঁধে দেয়। ১১ ডিসেম্বর ভর্তি শুরুর প্রথম দিনে ১৫টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টায় দ্বিতীয় দফায় ৫১৩ জন শিক্ষার্থীর মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়। একই সময়ে কলেজের নোটিশ বোর্ডে ‘আগে আসলে আগে ভর্তির সুযোগ পাবেন’ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়।
Advertisement
জানা গেছে, যে কোনো বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের সরকারের বেঁধে দেয়া ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার টিউশন ফি পে-অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়। এক্ষেত্রে নির্ধারিত ব্যাংকে অফিস চলাকালীন (সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত) পে-অর্ডার করার নিয়ম রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কলেজের নোটিশ বোর্ডে মেধাতালিকার সিরিয়াল প্রকাশ করা হলেও তার আগেই কমপক্ষে ১৭ জন শিক্ষার্থী (গোপনে আর্থিক লেনদেন সাপেক্ষে বলে অভিযোগ) পে-অর্ডার জমা দেয়। তাদের মধ্যে অধিকাংশই সরকার নির্ধারিত মেধাতালিকার অনেক পেছনের সিরিয়ালে রয়েছেন। যে ১৭ জন আগাম পে-অর্ডার পরিশোধ করে রেখেছিলেন জাতীয় মেধাতালিকায় তাদের সিরিয়াল ছিল যথাক্রমে ১৯০৪৩, ১৮৩০২, ১৫৫৮৬, ১৪৯৪৩, ১২৪২৭, ১২৪২৭, ১২০৮৫, ১১৫৬৬, ১১০৪৫, ১০৮১৭, ১০০৯৫, ৯৭৭১, ৯২১৬, ৮৮১৮, ৮০৭১, ৭৪৩৮ ও ৭১৭৮।
জানা গেছে, ১৫ ডিসেম্বর শুক্রবার ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে গত দুদিন ব্যাংক বন্ধ থাকার পাশাপাশি কোনো জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না করায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কিছুই জানতে পারেননি। অভিভাবকরা বলছেন, মেধাক্রম প্রকাশের আগে কীভাবে পে-অর্ডার জমা হলো, কীভাবে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হলো?
আজ (রোববার) সকালে মেধাতালিকার শীর্ষে থাকা অনেকেই তাড়াহুড়া করে ব্যাংক ড্রাফট করে এলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের ভর্তির জন্য সাক্ষাৎ করতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন। কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে রীতিমতো পাহারা বসানো হয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শুধুমাত্র গোপনে অর্থ লেনদেন করে তদবির ও যোগাযোগ করেছেন এমন শিক্ষার্থীদেরকেই সাক্ষাতের সুযোগ ও ভর্তি করা হয়। গভর্নিংবডির সদস্যদের মধ্যে ‘স’ আদ্যক্ষরের একজন অবৈধভাবে ভর্তির সুযোগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
Advertisement
কলেজের অধ্যক্ষ আকরাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেন, মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর ভর্তির নোটিশ প্রকাশ করা হয়। প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে ৭৩ জনকে ডাকা হয়। ১১ ডিসেম্বর ভর্তি হন ১৫ জন।
সাধারণ কোটার বাকি ৫৭ আসনের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করা হয়। এই তালিকার ৭৪ নম্বর সিরিয়াল থেকে ৫১৩ পর্যন্ত ডাকা হয়। সেদিন বিকেল ৫টার দিকে নোটিশ বোর্ডে ও সাড়ে ৫টায় ওয়েবসাইটে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। আজ দ্বিতীয় মেধাতালিকা অনুযায়ী ভর্তিও করা হয় বলে তিনি জোর দাবি করেন।
এমইউ/বিএ/জেআইএম