বিনোদন

‘গল্প ও শিল্পী সংকটেই চলচ্চিত্রে আজ দুর্দিন’

‘ঢাকাই চলচ্চিত্রের যে দুরবস্থা এটা তাড়াতাড়ি কাটিয়ে উঠতে না পারলে ফিল্মের ভারসাম্য রাখাটা কঠিন হয়ে যাবে। এখন কিন্তু বড় মাপের বা কালজয়ী হবার মতো ছবি খুব একটা নির্মিত হচ্ছে না, গল্প যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেভাবে বানানো হচ্ছে না। যারা ভালো ভালো ছবি নির্মাণ করেছেন, তারা সবাই নিরব হয়ে গেছেন। যার জন্য দর্শক নির্মিত হওয়া বেশিরভাগ ছবিগুলো দেখছে না। এই অবস্থার উত্তরণ দরকার।’ কথাগুলো বলছিলেন এক সময়ের সুপারহিট চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ আই মানিক।

Advertisement

গতকাল রোববার রাতে এফডিসিতে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে চলচ্চিত্রের হালচাল নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। মানিক বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এই খারাপ সময়ে হাল ধরার মতো ক’জন বিনিয়োগকারী আছেন? যেসব প্রযোজক আসছেন তারা প্রথমে যে টাকা লগ্নি করছেন সেগুলো ফেরত না পেয়ে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ছেন। তাদেরকে শিকার করা হচ্ছে, বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে না। প্রযোজক ডেকে এনে পথে বসানো হচ্ছে। যদি নতুন প্রযোজকদের প্রথম লগ্নির টাকা ফেরত দেয়া যায়, তবে আবার ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা হবে।’

‘স্বপ্নের বাসর’ ছবির এই পরিচালক আরও বলেন, ‘ভালো ছবি বানাতে হলে পরিচালকদের সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে। তাদের দায়িত্ব নিতে হবে শিল্পী তৈরি করার। কারণ ইন্ডাস্ট্রিতে এখন চরম শিল্পী সংকট। শিল্পী না থাকলে পরিচালকরা কাকে নিয়ে কাজ করবেন? এক শাকিব খান আর কত হাল ধরবে? বাকি যারা আছে তাদের সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাছাড়া ভালো গল্প নেই, বেশিরভাগ গল্পই নকল। চিত্রনাট্যে মেধা শূন্যতা দেখা যাচ্ছে। আমি মনে করি, গল্প ও শিল্পী সংকট বলেই চলচ্চিত্রের এই দুর্দিন। যেসব ছবি নির্মিত হচ্ছে, তা দর্শক আরো মাইনাস হচ্ছেন। এতে ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি হচ্ছে।’

দর্শকদের চাওয়াকেও মূল্যায়ণ করা হচ্ছে না উল্লেখ করে এফ আই মানিক বলেন, ‘ছবি বানানো হয় দর্শকদের জন্য। তাদের চাহিদাকে প্রাধান্য না দিয়ে ছবি নির্মাণ করা হয়, তাহলে দর্শক কেন ছবি দেখবেন? স্যাটালাইট টিভি এখন প্রত্যেকের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। নির্মাতারা চাইলেই কিন্তু তাদের চিন্তার মধ্যে দর্শকদের ধরে রাখতে পারবেন না। দর্শকরা কি চাচ্ছেন সেটা বুঝতে হবে।’

Advertisement

কথায় কথায় নির্মাতা মানিক উল্লেখ করলেন ‘যৌথ প্রযোজনা’ ও ‘সাফটা চুক্তি’র ছবিগুলো নিয়ে। তিনি বলেন, ‘যৌথ প্রযোজনার ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রির সবদিক দিয়ে উন্নতি সম্ভব নয়। এখানে দু-দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে ছবি বানানো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে স্বার্থ রক্ষা হয় না। আমি বলতে চাই, আগে আমরা দেশে ছবি নিয়ে চিন্তা করি। দেশের সংস্কৃতি আগে, পরে যৌথ নিয়ে ভাবা যাবে।’

মানিক বলেন, ‘সাফাটা চুক্তি আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য মাইনাস পয়েন্ট। কারণ, এখানে সমতা থাকে না। কলকাতার ছবির বাজেট হচ্ছে ১০ কোটি টাকা আর আমাদের ছবির বাজেট হচ্ছে ৮০ লাখ থেকে ১ কিংবা দেড় কোটি। কলকাতার ওরা কী বানাচ্ছে আর আমরা এই স্বল্প বাজেটে কী বানাচ্ছি সেটা মাথায় রাখতে হবে। তারউপর আমাদের ছবি ওপারে গেলেও ভালো মার্কেটিং পাচ্ছে না। এসব মানহীন ছবি ওদের যে কজন দর্শক দেখছেন তাদের মনে আরো বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছে আমাদের সম্পর্কে।’

ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলেন এফ আই মানিক। জানান, কিছুদিন আগে তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সংকটে পড়েছিলেন। সেই সংকট কাটিয়ে উঠেছেন। বলেন, ‘কয়েকজন আমার বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমার স্ত্রী ভালো আছে। আমরা সবাই ভালো আছি। আমি আবার আগের মতো ছবি বানাবো। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিন কাটাতে আমাদের সবাইকে যুদ্ধের মত লড়ে যেতে হবে।’

এফ আই মানিক নির্মাণ করেছেন কোটি টাকার কাবিন, চাচ্চু, দাদীমা, আমাদের ছোট সাহেব, সবার উপর তুমি, যদি বউ সাজো গো, মায়ের হাতে বেহেশতের চাবি, ভাইয়া, মান্না ভাই, ভাইয়া, এক জবান, স্বামী ভাগ্য ইত্যাদি সুপারহিট সব ছবি।

Advertisement

জানুয়ারিতে ডিপজলের প্রযোজনায় নতুন ছবি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন। এছাড়া শাকিব খানকে নিয়ে ‘কিছু কিছু মানুষের জীবনে’ নামে আরো একটি ছবি নির্মাণ করার ঘোষণাও দিয়েছেন এফ আই মানিক।

এনই/এলএ