কক্সবাজার সাগরপাড়ে চলমান তিন দিনের ‘জেলা ইজতেমা’য় মুসল্লিদের ঢল নেমেছে। ফজরের নামাজের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলমান বয়ান, তাহাজ্জুতের নামাজের পর প্যান্ডেলে অবস্থান নেয়া লাখো মুসল্লির জিকিরে ভিন্ন রকমের আবহ তৈরি হচ্ছে সৈকতপাড়ে। আল্লাহর সন্তুষ্টি আর নৈকট্য লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইজতেমায় শরিক হন। ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের সাথে জুমার নামাজসহ অন্য জামাতে স্থানীয় নানা পেশার মানুষ যোগ দেয়ায় কানায় কানায় ভরে ওঠে ইজতেমা প্রাঙ্গণ। এসব সময়ে কয়েকলাখ মুসল্লির সমাগম হয় বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
Advertisement
শনিবার জোহরের নামাজের পর আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের ইজতেমা সমাপ্ত হবে। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে মৌসুমী নিম্নচাপের কারণে শুরু হওয়া অসময়ের বর্ষণের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের জেলে পার্ক মাঠ-সংলগ্ন সৈকতের পাড়ের ১৭ একর জায়গাজুড়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী কক্সবাজার জেলা ইজতেমা শনিবার শেষ দুপুরে শেষ হবে। বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মাধ্যমে শুরু হওয়া ইজতেমায় ধীরে ধীরে মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইজতেমায় অংগ্রহণকারীরা ছাড়াও শুক্রবার জুমার নামাজে পৌরসভা, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও রামুসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল মুসল্লি অংশ নেন। নামাজে কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন স্থরের কর্মকর্তাসহ কক্সবাজারের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। জুমার নামাজে সামিল হন নারীরাও। সব মিলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেন।
আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানায়, জেলা পর্যায়ে ক্যাটাগরিতে কক্সবাজারে তৃতীয়বারের মতো ইজতেমা চলছে। পাঁচ লাখ মুসল্লি সমাগমের লক্ষ্য নিয়ে পুরো ইজতেমা স্থলের ১৭ একর জায়গায় প্যান্ডেল করা হয়। জেলার রামু, চকরিয়া, সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া টেকনাফ, উখিয়া এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ও লামা উপজেলার মানুষ ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়াও কক্সবাজারে অবস্থানরত দেশের বিভিন্ন স্থানের ও বাংলাদেশ অবস্থানরত ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার তাবলিগ জামাতের লোকজন অংশ নিয়েছেন। ইজতেমায় তাবলিগ জামাতের আহলে সুরা মোজাম্মেলুল হক, ছৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, মাওলানা মোশারফ ও কাকরাইল মসজিদের ওস্তাদ মনির বিন ইউসুফসহ দেশবিদেশের আরও বেশ কয়েকজন বক্তা বয়ান করছেন।
Advertisement
ইজতেমা বাস্তবায়ন কমিটির জিম্মাদার আতাউল করিম জানান, ইজতেমায় মুসল্লিদের প্রয়োজনে বসানো হয়েছে ৬শ’ টয়লেট, শতাধিক নলকূপ, সাতটি বিশাল আকারের ওজুখানা, পানির জন্য ২২টি মোটর। মুসল্লিদের খেদমতের জন্য ইজতেমার কর্তৃপক্ষের এক হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন। নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের সাড়ে তিন’শ পুলিশ সদস্য দায়িত্বপালন করছেন। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি আর নৈকট্য লাভের আশায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইজতেমায় শরিক হন। ইতোমধ্যে কয়েকলাখ মুসল্লি জমায়েত রয়েছেন। তবে মৌসুমী চাপের প্রভাবে বর্ষণের ফলে একটু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্যান্ডেল এলাকায় টানানো হয়েছে বেশ কিছু তেরপল। বৃষ্টি থাকলেও শনিবার আখেরি মোনাজাতে রেকর্ড পরিমাণ মুসল্লি সমবেত হবেন বলে আশা করছেন তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল বলেন, ইজতেমা ও মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তায় পাঁচস্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
নওমুসলিম হলেন তিন যুবকচলমান কক্সবাজার জেলা ইজতেমার মাঠে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তিন যুবক নওমুসলিম হয়েছেন। তারা পূর্বের নাম ও ধর্ম ছেড়ে পবিত্র কালেমা পড়ে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আবিষ্ট হয়েছেন। তারা নতুন নাম ধারণ করেছেন নুরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও সাইফুল ইসলাম।
Advertisement
তারা বলেন, ইসলামের শীতল ছায়ায় থাকা মুসলমান ভাইদের ভ্রাতৃত্ববোধ ও মরণের পর সম্মানের সাথে সমাহিতকরণ এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচারে আকৃষ্ট হয়ে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। তবে, পূর্বের নাম ও ধর্ম সম্পর্কে কিছু না জানাতে অনুরোধ করেছেন তারা। তারা ইসলামে যোগদানের সাথে সাথে ১২০ দিন আল্লাহর রাস্তায় সময় দিতে জামাতবন্দি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাদের নওমুসলিম হতে সহায়তাকারী আবুল কাসেম।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ