দেশজুড়ে

উদ্ধার করা সাপ নিয়ে খামার করলো ২০ যুবক

বাসা-বাড়ি থেকে উদ্ধার করা বিষধর গোখরা নিয়ে সাপের খামার গড়ে তুলেছেন ২০ জন যুবক। রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার কাঁসাদহ গ্রামে পরীক্ষামূলক এই বিষধর সাপের খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ৮৩ শতাংশ জমির উপর এই খামারটি গড়ে তুলেছেন ওই এলাকারই তন্ময় সরকার, শাহিনুজ্জামান, মিরাজ শেখ, রমেশ বিশ্বাস, প্রদীপ বিশ্বাস, মন্দীপ কুমার বিশ্বাসসহ আরো কয়েকজন।  এদের মধ্যে মূল উদ্যোক্তা হলেন মো. রবিউল ইসলাম রঞ্জু মল্লিক।  বাকিরা তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন।পরীক্ষামূলক এই খামারের তারা নামকরণ করেছে ‘রাজবাড়ী স্ন্যাক ফার্ম’ নামে।বর্তমানে খামারটিতে রেটস্নেক, কাউকিয়া, পাইথন, রাসেলফইবারসহ ৬ প্রজাতির ৫০টি বিষধর গোখরা সাপ রয়েছে রয়েছে।  কয়েকটি সাপ ইতোমধ্যে ডিমও দিয়েছে।  এছাড়াও খামারের ও বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ এর মতো ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।  এসব ডিম দিয়ে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে খামারেই।  এতে খামারের উদ্যোক্তারা বেজায় খুশি।অন্যদিকে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খামার উন্মুক্ত করা হয়।সাপগুলোকে প্লাস্টিকের খাঁচা ও ৯টি হাউজের মধ্যে পালন করা হচ্ছে।  খামারের ৫০টি গোখরা সাপের বেশির ভাগই স্থানীয় বাসাবাড়ি থেকে উদ্ধার করা।ইতোমধ্যেই খামারটি জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। রাজবাড়ী স্ন্যাক ফার্ম এর উদ্যোক্তা ও মালিক মো. রবিউল ইসলাম রঞ্জু মল্লিক জানান, আগামী ১৬ জুলাই বিশ্ব সর্প দিবস উপলক্ষে জেলা শহরে একটি র্যালি ও আলোচনা অনুষ্ঠান করা হবে। এবং পবিত্র ঈদুল-ফিতর এর দিন থেকে ৭ দিনব্যাপী সর্প মেলার আয়োজনের উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়েছে।তিনি আরোও জানান, ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে করতে জৈব সার ও সাপের খামারের কিছু তথ্য পাই।  পরে যোগাযোগ করি ঝিনাইদহের জৈব সার খামারি হেলাল উদ্দিন এবং পটুয়াখালীর সাপের খামারি আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে।  হেলাল উদ্দিনের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের খ্যাতিমান কৃষিবিজ্ঞানী এম গুল হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে গড়ে তুলি এই সাপের খামার।  এলাকাবাসী প্রথমে পাগল বলে আখ্যায়িত করলেও পড়ে তারা এখন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।  এলাকায় এখন আর কেউ সাপ মারে না।  কারো বাড়িতে সাপ ধরা পড়লে আমাদের খবর দেয়।  আমরা গিয়ে সাপটি উদ্ধার করে খামারে নিয়ে আসি।তার খামারের সাপগুলোকে সপ্তাহে একদিন করে ছোট মুরগীর বাচ্চা ও ক্ষেতে খামারে পাওয়া দেশি ইঁদুর খাওয়ানো হয়।  ৭ দিনে দুই বার গোসল করাতে হয়।  একদিন সাপের খাঁচা ও ঘর পরিস্কার করতে হয়।  সাপ ধরতে ও পালন করতে লাঠি, টং, হাত মোজা, গ্লোপস, পায়ে বড় বুট ব্যবহার করা হয়।  বিষধর এই সাপ নিয়ে খেলা জীবনের সঙ্গে বড় বাজি।  যখন তখন ঘটতে পারে মৃত্যুর মতো দুর্ঘটনা।  তাই জেলার হাসপাতালে দরকার সাপের কামড়ের এন্টি ভেকসিন।  বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সাপের খামার করে বিষ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা অনেক সহজ।  এতে খরচও অনেক কম।  সরকারের সহযোগিতা ও খামারের নিবন্ধন পেলে তারা এ সাপের খামারের বিষ সংগ্রহ করে দেশের ওষুধের চাহিদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।  পাশাপশি অর্জন করতে পাবে বৈদেশিক মুদ্রা।খামারের প্রদীপ শীল জানান, তারা এলাকার ভাই ও বন্ধুদের নিয়ে এ সাপের খামারে কাজ করছে।  খুব সতর্কতার সঙ্গে খামারে কাজ করতে হয়।  এছাড়া পাশাপাশি তারা খামারে হাঁস-মুরগি, কবুতর, মাছসহ অন্যান্য উপার্জনের ক্ষেত্র তৈরি করবে।  এ পর্যন্ত খামারের স্থাপনা নির্মাণসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা। রাজবাড়ী সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. নূরুজ্জামান জানান, রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের কাঁসাদহ গ্রামে বিষাক্ত সাপের একটি খামার গড়ে উঠেছে।  রাজবাড়ী সরকারি কলেজের কয়েকজন উদ্যোগী ছাত্র এ খামারটি গড়ে তুলেছে। প্রকৃতিতে বিলুপ্ত প্রায় এই বিষাক্ত সাপ নিয়ে যে খামারটি গড়ে তুলেছে সেটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমি সব সময় তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবো।এমএএস/আরআইপি

Advertisement