মিয়ানমারের রাখাইনে পরিচালিত সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানে সংখ্যালঘু কয়েকশ’ রোহিঙ্গা মুসলিমের প্রাণহানি, হাজার হাজার রোহিঙ্গার আহত ও লাখ লাখ রোহিঙ্গার দেশ ত্যাগের ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলতে নারাজ দেশটির উগ্রপন্থী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। বরং রাখাইনে মুসলিমদের কারণে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরাসহ অন্যরা বর্তমানে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে অভিযোগ করেছে উগ্র বৌদ্ধরা।
Advertisement
তারা বলছেন, মুসলিমদের কারণে সেখানে অন্য ধর্ম বর্তমানে হুমকিতে অাছে। তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতি পালনও হুমকির মধ্যে রয়েছে বলে অভিযোগ বৌদ্ধদের। রাখাইনের বৌদ্ধরা প্রতিনিয়ত সেখানে স্থানীয়দের দান করা খাবার বিতরণ করেন। এসব খাবারের মধ্যে থাকে ভাত, সবজি ও বিস্কুট। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা এ খাবার বিতরণ কর্মসূচি পালন করেন। কিন্তু সেখানকার প্রভাবশালী বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বলছেন, তাদের এ ঐতিহ্য এখন হুমকির মুখোমুখি হয়েছে।
সংখ্যালঘু জাতি ও ধর্ম সুরক্ষায় উগ্র ও কট্টরপন্থী বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব রেস অ্যান্ড রিলিজিয়ন স্থানীয়ভাবে ‘মা বা থা’ নামেও পরিচিত। সংস্থাটির প্রধান সন্ন্যাসী থ্য পারকাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল বর্তমানে সেখানে প্রধান হুমকি কী? তিনি বলেন, ইসলাম।
উগ্র বৌদ্ধদের এই সংস্থা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমবিরোধী মনোভাবের বীজ বপণ করছে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের সময় উগ্র বৌদ্ধদের ঘৃণা ছড়ানোর মাত্রা আরো বেড়েছে। সেনাবাহিনীর ওই অভিযানে ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে।
Advertisement
৪৬ বছর বয়সী ওই সন্ন্যাসী ইয়াঙ্গুনের পাশের শহর জ্য তা ওনের দেমারন মঠ থেকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যা বলছে বিষয়টি আসলে তেমন নয়। এটা মোটেও গণহত্যা নয়। ইয়াঙ্গুনের শতাধিক সন্ন্যাসীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।
গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীও বলছে, তারা রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে অভিযান শুরু করেছেন; যারা গত ২৫ আগস্ট পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা রাখাইনে নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে সেনাবাহিনী এ অভিযোগ বরাবরের মতো প্রত্যাখ্যান করে আসছে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে অভিহিত করেছে।
উগ্রপন্থী বৌদ্ধ নেতা থ্য পারকা এ দাবিকে বুনো অভিযোগ বলে দাবি করেছেন। তার ধারণা রাখাইনে সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৌদ্ধরা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের জাতিগত সংখ্যালঘু মানুষজন না খেয়ে দিন পার করে। তাদের গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয়া হয়। যদি তারা (রোহিঙ্গারা) সেখানে থাকে; তাহলে একত্রে বসবাস করা অসম্ভব।’
Advertisement
রোহিঙ্গাবিরোধী এ মনোভাব বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষই পোষণ করে। রোহিঙ্গাদের জন্য দেশটিতে বৌদ্ধদের সহানুভূতি নেই বললেই চলে। রোহিঙ্গা সঙ্কটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে অযাচিত বলে মন্তব্য করছে বৌদ্ধরা। দেশটিতে রোহিঙ্গা শব্দটিকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে বৌদ্ধরা। একই সঙ্গে এ রোহিঙ্গাদের অবৈধ ‘বাঙালি’ অভিবাসী হিসেবে মনে করে।
সূত্র : সিএনএন।
এসআইএস/এমএস