ক্যাম্পাস

এক বছরেও উন্মোচন হয়নি দিয়াজ হত্যার রহস্য

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের এক বছরেও হত্যার রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় একটি ভাড়া বাসা থেকে ওই ছাত্রলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। ঘটনার পর মামলাও হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি নেই।

Advertisement

থানায় মামলাটি গত মাসে নথিভুক্ত হওয়ার পর সিআইডি থেকে হাটহাজারী থানা পুলিশের কাছে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়নি। এছাড়া আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও গ্রেফতার হয়নি কোনো আসামি।

এ বিষয়ে দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জোবাঈদা সরোয়ার নিপা ক্ষোভ প্রকাশ করে জাগো নিউজকে বলেন, আসামিরা পুলিশের সামনে ঘুরলেও তাদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এর ফলে আসামিরা আলামত নষ্ট ও সাক্ষীদের হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। প্রশাসন ও আসামিরা এ মামলাকে প্রভাবিত করতে চাইছে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী না দেখলে আমরা সুষ্ঠু বিচার পাবো না।

অন্যদিকে এ ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে হাটহাজারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীর জাগো নিউজকে বলেন, তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারেও তৎপরতা চলছে। তবে পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

Advertisement

দিয়াজের মরদেহ উদ্ধারের পর ২৩ নভেম্বর প্রথম ময়নাতদন্তে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা প্রতিবেদন দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে পুলিশ বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে।

পরবর্তীতে তা প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগ (সি আর মামলা) দেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। আসামি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনকেও।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর জামশেদ, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম জিশান, যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আলম, সহ-সভাপতি আবদুল মালেক, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান, সহ-সম্পাদক আরেফুল হক অপুকেও আসামি করা হয়।

আসামিরা সবাই চট্টগ্রামের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দিয়াজও ছিলেন মেয়রের অনুসারী।

Advertisement

এদিকে আদালত দিয়াজের মায়ের অভিযোগ গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন। আদালতের নির্দেশে ৬ ডিসেম্বর কবর থেকে মরদেহ তুলে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে ২য় ময়নাতদন্ত হয়। তার সাত মাস পর চলতি বছরের ৩০ জুলাই ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ নিশ্চিত করে এটি ‘শ্বাসরোধে হত্যা’।

পরবর্তীতে মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ আগস্ট হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ,পাসপোর্ট জব্দ এবং তারা বিদেশে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পূর্বের সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত।

পরিবার ও দিয়াজের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরেই পরিকল্পিতভাবে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে।

দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জোবাঈদা সরোয়ার নিপা জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম থেকেই আমরা এটিকে মার্ডার বলেছি। ১০ মাস পর তা প্রমাণও হয়।

পুলিশের তদন্তে আমাদের কোনো আস্থা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করি। তখন তিনি চট্টগ্রামের ডিআইজিকে মামলাটি বিশেষভাবে দেখতে বলেন। ডিআইজি এ বিষয়ে আলাদা করে কমিটি গঠন করলেও আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি নেই।

মামলার প্রথম তদন্ত সংস্থা সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, আমরা সব নথিপত্র আদালতে জমা দিয়েছি। এখন মামলাটি থানা তদন্ত করে দেখবে।

এদিকে সোমবার দিয়াজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে শোক র‌্যালি ও কুরাআন খানির আয়োজন করে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

আবদুল্লাহ রাকীব/আরএআর/আইআই