চতুর্থ দিনের মতো আজ বৃহস্পতিবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে অসমাপ্ত বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫নং বিশেষ জজ ড. আখতারুজ্জামানের আদালতে প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য দেন তিনি।
Advertisement
বক্তব্যের এক পর্যায়ে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো’র কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন খালেদা। আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তিনি বলেন, ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিনের অবৈধ সরকার মিথ্যা মামলায় আমাকে এবং আমার দুই ছেলেকে গ্রেফতার করেছিল। বন্দী অবস্থায় পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে তাদেরকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার বড় ছেলে তারেক রহমান সেই নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখনও বিদেশে চিকিৎসাধীন। আমার ছোট ছেলেটি আর সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়নি। বিদেশে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই সে অকালে আমাদেরকে ছেড়ে চির বিদায় নিয়েছে। সন্তানের অকাল মৃত্যুর সেই দুঃসহ ব্যথা বুকে চেপে আমি এখনও দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমি এবং শেখ হাসিনা, এ দু’জনকেই জোর করে ‘মাইনাস’ করার উদ্দেশ্যে তারা সব ধরনের তৎপরতা শুরু করে। আমাকে গৃহবন্দী করা হয়।
খালেদা বলেন, বিদেশ সফররত শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তিনি দেশে ফিরে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণেই তিনি চরম অশোভন আচরণের শিকার হন। আমি কিন্তু তখন চুপ করে থাকতে পারতাম। কিন্তু অন্যায়কে আমি মেনে নেইনি। গৃহবন্দী অবস্থা থেকেই আমি শেখ হাসিনার প্রতি সেই অন্যায় আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। আমি আমার বিবৃতিতে তার মুক্তি দাবি করেছিলাম।
Advertisement
এ দিন তার বক্তব্য শেষ না হওয়ায় বিচারকের কাছে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করে ১৬ নভেম্বর পরবর্তী অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য দিন ধার্য করেন। অপর দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তার স্থায়ী জামিন আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। এ দিন দেড় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আদালতে তিনি বক্তব্য দেন। বেগম খালেদা জিয়া বেলা ১১টা ৩৮ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন। দুপুর ১২টা ৬ মিনিট থেকে ১টা ৩২ মিনিট পর্যন্ত তিনি আদালতে বক্তব্য দেন। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে আদালত ত্যাগ করেন খালেদা।
এ দিন জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি আবেদনে বলেন, পৃথিবীর কোনো ইতিহাসে সাপ্তাহিক জামিন দেয়ার নজির নেই। মামলায় খালেদাকে সাপ্তাহিক জামিন দেয়া হয়েছে। তিনি বয়স্ক মহিলা। তাই তার স্থায়ী জামিন মঞ্জুর করা হোক।
অপরদিকে দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, মামলা দুটি জামিন অযোগ্য ধারার। তাকে স্থায়ী জামিন দিলে আমার আপত্তি আছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। আগামী ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত খালেদার জামিন মঞ্জুর করেন।
আদালতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুল ও খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ। আইনজীবী হিসেবে আদালতে উপস্থিত ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন, এজে মোহাম্মদ আলী, জমির উদ্দিন সরকার, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জিয়া উদ্দিন জিয়া, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ ও এম হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
Advertisement
জেএ/এআরএস/জেআইএম