‘দয়া করে এসো হে দয়াল, এসো এ অধীনের হৃদ মাঝারে/ আমি মায়া জালে বন্দী ভয়ে কাঁদি একা, আপনো ভাবিয়া দাও এসে দেখা/ তুমি হৃদয় মধ্যে উদয় হও, নিরানন্দ দূরে দাও, আনন্দ দাও দয়াল আমারে…/’
Advertisement
বৈঠকী গানের আসরের শুরু বেলায় গুরু ভজনের এ গান না হলে যেন ভাব-ই আসে না। ব্যক্তি মানুষ তার অক্ষমতা, দুর্বলতা প্রকাশ করেই ঈশ্বরের কৃপা পেতে আকুতি জানায় এ গান বন্দনায়। সাধকেরা আধ্যাত্বিক গানের জলসায় দেহতরীতে দয়াল নামের (ঈশ্বরের) পরশ অনুভব করেন এসব তত্ত্বকথা আর সুরের মেলবন্ধনে।
এবারে আন্তর্জাতিক ফোক ফেস্টিভ্যালে এ গানেই ভাব সাগরে ঢেউ তুলবেন বাউলকূলের অন্যতম পুরোধা সাধক পুরুষ আরিফ দেওয়ান। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকা আর্মি স্টেডিয়াম মাতাবেন বাংলায় আধ্যাত্বিক গানের রত্ন ভাণ্ডার নামে পরিচিতি দেওয়ান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের এ বাউল শিল্পী। সম্পূর্ণ দেশীয় বাদ্যযন্ত্র আর উত্তারাধিকার সূত্রে পাওয়া মহাজনী বাণীর পসরা নিয়ে বসবেন আরিফ দেওয়ান। গাইবেন নিজের লেখা গানও।
এক সাক্ষাৎকারে এ প্রতিবেদকের মনোবাসনা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘উদাস না হলে নাকি সুবাতাস মেলে না।’ গায়ে সুবাতাস লাগাতে ঘরের বাহির হয়েছেন শৈশবেই। সংসারও পেতেছেন, তবে তাতে থিতু হতে পারেননি। সাধন-ভজন আর ভক্তমনের লীলা খেলাই তার সংসার ধর্ম।
Advertisement
সঙ্গীত সাধনায় মন বেধেছেন শিশুকালে। বাউলিয়ানায় হাতে-খড়ি প্রখ্যাত বাউল সাধক দাদা মালেক দেওয়ানের কাছে। এখন সাধন মঞ্চের পরিণত সাধক। ভক্তি মিলছে, মিলছে খ্যাতিও। উপমহাদেশের বিখ্যাত ‘সঙ্গীত সাধন কুঞ্জ’ বলে পরিচিত দেওয়ান পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের প্রতিনিধি আরিফ দেওয়ান। বসবাস ঢাকার অদূরে কেরানীগঞ্জের বামনশুরের দেওয়ান বাড়িতেই। পালা গানে পরিচিতি মিললেও এখন বাউলের সর্ব ডালে ভর তার। ভক্তিমূলক, মুর্শিদি, বিচ্ছেদ, ভাববিচ্ছেদ, কীর্তনে তার কোনো জুড়ি নেই। মৌলিক গানেও পাকা মুন্সিয়ানা তার। ভজনের দ্যূতি ছড়াচ্ছেন বিদেশের মাটিতেও। ইউরোপ-আমেরিকার রঙিন মঞ্চেও প্রতিষ্ঠা দিচ্ছেন বাংলার লোকোগান, বাউল গান। ওপার বাংলাতেও গাইছেন সমান সুনামে।
গুণী এ সাধক বাউলের গান, সাধনার মুখ্য বিষয় দেহতত্ত্ব। বলছিলেন, ‘মানুষ বস্তুবাদের সীমারেখায় আটকে পড়েছে। একজন মানুষের প্রেম এবং কাম দুটোই আছে। মানুষ যদি কামের ফাঁদেই আটকে পড়ে, তখন প্রেম আপনা থেকেই উধাও হয়। প্রেম হচ্ছে সর্বজনীন। কামের ফাঁদে আটকা আছে বলেই মানুষ ঈশ্বর বা মানুষের প্রতি প্রেম নিবেদন করতে পারে না।’ ভক্ত প্রেমকে নিশানায় ধরে বন্দনা করছেন মানবকুলের। বলেন, ‘মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইছি, আর মাটিতে বসে শত শত ভক্ত চোখের জল ফেলছে। ভক্তের এক ফোঁটা চোখের জল আমার কাছে হাজার টন হীরার চেয়ে অধিক মূল্যবান।’
ফোক ফেস্টের প্রস্তুতি কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘গানেই তো থাকি। বিদেশের মাটিতে বহু ফোক উৎসবে এ দেশীয় বাউল গানের মর্মকথা তুলে ধরেছি। সুতরাং বিশেষ কোনো প্রস্তুতির দরকার আছে বলেও মনে করি না। দয়াল চাইলেই ভক্তমনে ভর করতে পারব।
এএসএস/এমআরএম/আরআইপি
Advertisement