জেলার সাত উপজেলাই নদী বেষ্টিত। এরমধ্যে নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা সন্ধ্যা নদীর দুই তীরে অবস্থিত। প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা তীরের মানুষের কানে ভেসে আসে লোহার ঝংকার। নদীর দুই কূলে অবস্থিত জাহাজ নির্মাণের ‘ডকইয়ার্ড’ থেকে ভেসে আসে এমন শব্দ।
Advertisement
প্রায় ৩০ বছর ধরে নেছারাবাদে জাহাজ নির্মাণের কাজ চলছে। আগে হাতেগোনা কয়েকটি ডকইয়ার্ডে ছোট আকৃতির জাহাজ তৈরি হলেও বিগত ৫ বছরের বেশি সময় ধরে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছে এ শিল্প। ফলে ২৫টিরও বেশি ডকইয়ার্ডে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় তিন সহস্রাধিক মানুষের। শুধু সন্ধ্যার দুই কূলে নয়, এই নদীতে মিশে যাওয়া বড় বড় খালের পাড়েও গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড।
অধিকাংশ ডকইয়ার্ড নেছারাবাদের সোহাগদল, স্বরুপকাঠি, সুটিয়াকাঠি, পঞ্চবেকি, বাইরুলা, বরছাকাঠি এবং ছারছিনায় অবস্থিত। এ ডকইয়ার্কে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ায় যুবকরা সৎভাবে উপার্জন করছে। শুধু নেছারাবাদ উপজেলা নয়, বিভিন্ন এলাকার মানুষও কর্মসংস্থানের খোঁজে ছুটে আসছেন এখানে। তারা সর্বোচ্চ ৪০ টাকা ঘণ্টা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছেন।
আরও পড়ুন- ঝিনাইদহে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা
Advertisement
বালুবহনকারী কার্গোসহ প্রায় ১০ ধরনের লোহার তৈরি নৌযান তৈরি হয় নেছারাবাদের ডকইয়ার্ডগুলোতে। যেখানে বর্তমানে ৩০ ফুট থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫০ ফুট পর্যন্ত লম্বা জাহাজ তৈরি হচ্ছে। বরিশাল, বরগুনা, পটুয়াখালী ছাড়াও ঢাকা থেকে লোকজন নেছারাবাদের ডকইয়ার্ডে আসে জাহাজ তৈরির জন্য। ডকইয়ার্ডের ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি কম হওয়ায় তারা এখানে আসেন বলে জানান জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাথে জড়িত আব্দুর রশিদ।
নতুন জাহাজ নির্মাণের পাশাপাশি পুরাতন জাহাজও নির্মাণ করা হয় এসব ডকইয়ার্ডে। খরচ কম হওয়ায় দূর-দূরান্তের লোকজন এখানে ছুটে আসেন তাদের পুরনো জলযানগুলো মেরামত করতে। জাহাজের আকারভেদে জায়গার ভাড়া হিসেবে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দিতে হয় ডকইয়ার্ড মালিককে। বর্তমানে উপজেলার শতাধিক মানুষ জাহাজ নির্মাণ ব্যবসার সাথে জড়িত। তবে জাহাজ নির্মাণের অধিকাংশ ঠিকাদার ঢাকার গোয়ালন্দ এলাকার।
তবে ডকইয়ার্ডে যে সব মিস্ত্রি কাজ করেন, তাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে কাজ করেন। সরকারি উদ্যোগে যথাযথ প্রশিক্ষণ পেলে কাজের মান আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তারা মনে করেন। অন্যদিকে ডকইয়ার্ডে তেমন উন্নত মানের যন্ত্রপাতি নেই। ডকইয়ার্ডগুলোর মানোন্নয়নের জন্য সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন সালেহিয়া ডকইয়ার্ডের কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম।
আরও পড়ুন- বিরিয়ানির হাঁড়িতে লাল কাপড় থাকে কেন?
Advertisement
এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট কাজের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে বলেও জানান জাহাজ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা। শিল্পটির আরও সম্প্রসারণের জন্য এ সমস্যারও সমাধান চান তারা।
হাসান মামুন/এসইউ/এমএস