১০ বছর আগের পুলিশ আর বর্তমান সময়ের পুলিশ এক নয়। ১০ বছর আগের পুলিশ ছিল আতঙ্কের নাম। আর এখন জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করায় মানুষের নিশ্চিত নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের অপর নাম পুলিশ। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করে এমন মন্তব্য করেন।
Advertisement
সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে একটি সুশৃঙ্খল ও জনবান্ধব বাহিনীতে রূপান্তর করতে বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নানা উদ্যোগ। জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, মাঠপর্যায়ে কর্মরত সদস্যদের আবাসন, স্যানিটেশন, খাবার ও কর্মঘণ্টাসহ সব ক্ষেত্রেই আনা হয় আমূল পরিবর্তন। রাজধানী ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশও (ডিএমপি) এর বাইরে নয়।
ঢাকা মহানগরে মাঠপর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগের চেয়ে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন সাধন হলেও আবাসন ও স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে তারা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। কারণ তাদের থাকার নির্ধারিত ব্যারাকের একটি হলরুমে একসঙ্গে ৭৮ জনকে অবস্থান করতে হয়। অর্থাৎ ব্যারাকের প্রতি ফ্লোরে পাশাপাশি দুটি হলরুমে থাকছেন ১৫৬ পুলিশ সদস্য। ফলে স্যানিটেশন, গোসল, খাবারগ্রহণসহ অনেক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাদের।
আগে টিনের শেডের নিচে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে তারা আরও জানান, এটা ঠিক যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। টিনশেড থেকে এখন বহুতল ভবনে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। কিন্তু এখনও একটি হলরুমে ৭৮ জনকে থাকতে হয়। এতে সমস্যা তো হচ্ছেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্যানিটেশনে।
Advertisement
ডিএমপি’র কর্তাব্যক্তিরা এ প্রসঙ্গে বলেন, এক সময়ের দাঙ্গা পুলিশ যেমন এখন আর নেই, নাম পরিবর্তন করে হয়েছে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট; তেমনি আবাসন, স্যানিটেশন, খাবার ও কর্মঘণ্টাসহ সব ক্ষেত্রেই এসেছে আমূল পরিবর্তন। সামনে ১৮তলা একটি ব্যারাক নির্মিত হচ্ছে। জনবল যেমন বাড়ছে তেমনি আবাসন সুবিধার ওপর আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে তা যুগোপযোগী করা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানিয়েছে, ডিএমপি বাংলাদেশ পুলিশের একটি বড় বিভাগ। দেশের রাজধানী ও সবচেয়ে জনবহুল শহর ঢাকা মহানগরীতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব পালন করে ডিএমপি। পুলিশ বাহিনীর সম্প্রসারণের অংশ হিসেবে ১২টি থানা নিয়ে ছয় হাজার জনবলে ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। তবে জনসংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিসহ পুরো শহরের অবকাঠামো, অফিস-আদালত ও রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিএমপিও সম্প্রসারিত হয়েছে। ৪৯টি থানা হয়েছে, হয়েছে আলাদা পুলিশ লাইন্স।
রাজধানীর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ১৯৮৫ সালে গঠিত হয় দাঙ্গা পুলিশ। ২০০৭ সালে তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার দাঙ্গা পুলিশের নাম পরিবর্তন করেন ‘পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট’। ডিএমপির জনবল এখন অর্ধলাখ। ডিএমপির একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হচ্ছে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট, যা সংক্ষিপ্তভাবে পিওএম। পিওএম’র চারটি শাখা। এর মধ্যে মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টের ভেতরে রয়েছে তিনটি শাখা। উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম। পূর্ব বিভাগটি রাজারবাগে অবস্থিত।
সম্প্রতি নতুন করে ডিএমপির জন্য ডেমরা পুলিশ লাইন্স নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে থাকবে পিওএম’র পূর্ব বিভাগ।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মিরপুরের পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্টে পুলিশ সদস্যদের আবাসনের জন্য রয়েছে ১১টি ব্যারাক। তিনটি ছয়তলা, বাকি সব পাঁচতলা বিশিষ্ট। এর মধ্যে সাধারণ পুলিশ সদস্য রয়েছেন সাড়ে ছয় হাজার। আলাদা একটি হলে রয়েছেন হাজারখানেক ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। এছাড়া ব্যারাকের বাইরে তাঁবুতে থাকছেন পুলিশের অধীন কাজ করা আনসার সদস্যরা। সব মিলে সোয়া সাত হাজার পুলিশ সদস্য থাকছেন মিরপুরে।
বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যের একসঙ্গে থাকায় সমস্যা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম নামে এক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘আমি এখানে দীর্ঘদিন ধরে আছি। আগের অবস্থার চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এরপরও বলতে হয়, আমরা এখনও এক হলরুমে ৭৮ জন করে থাকছি। পাশাপাশি দুই হলে থাকছি মোট ১৫৬ জন। একবার কল্পনা করুন, পরিবেশটা আপনার মতো থাকে কি না?’
‘শুধু ৭৮ জন থাকা নয়, সীমিত বাথরুম, গোসলখানা। স্যানিটেশনের বিষয়টি চিন্তা করুন! পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। সিরিয়াল দিয়ে প্রয়োজনীয় সব সেরে নিতে হয়। হল রুমে কোলাহল, শব্দ তো আছেই। আলাদা পার্টিশন দিয়ে থাকার ব্যবস্থা কিংবা আলাদা আলাদা কক্ষে সাত-আটজন করে থাকার ব্যবস্থা করা হলে সবচেয়ে ভালো হতো।’
অপর এক ব্যারাকের ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, এক সময় তো টিনশেড ভবনের ওপর থেকে পানি পড়ত। এক শিফট ডিউটি শেষ করে এসে অপেক্ষায় থাকতে হতো। ব্যারাকের শিফট প্রস্তুতি শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার পর অবসর মিলত ডিউটি শেষ করে আসা সদস্যদের। কিন্তু এখন তো সে অবস্থা নেই। সবার জন্যই আলাদা বিছানা।
ডিএমপির পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট’র যুগ্ম কমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, পিওএম’র আগের স্মৃতি কেউ মনে রাখতে চায় না। একজন পুলিশ সদস্য হিসেবে বলব, সে অবস্থা এখন আর নেই। আমূল পরিবর্তন এসেছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় আমার এখানে দায়িত্ব পালনের সুযোগ হয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে এখানে সহকারী কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছি। তখনকার পরিবেশ-অবস্থা এখন নেই। অনেক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। শুরুতে এখানে একটি মাত্র ব্যারাক ছিল। তাও আবার টিনশেড। হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য সেখানে থাকতেন। এখন জনবল বেড়েছে। বেড়েছে ব্যারাকও। ১১টি ব্যারাকে এখন সাড়ে ছয় হাজার পুলিশ সদস্য থাকছেন।
‘আগামীতে আবাসন সুবিধা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১৮তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। এটি নির্মিত হলে আবাসন নিয়ে আর কোনো অসুবিধা থাকবে না।
জেএ/এমএআর/পিআর