আল্লাহ তাআল সুরা বাকারার ২৫২নং আয়াতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘(হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয় আপনি রাসুলগণের মধ্যে অন্যতম।’
Advertisement
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, শুধুমাত্র প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য নবিগণের ন্যায়ই একজন নবি। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা তা নয় বরং যুগে যুগে আল্লাহ তাআলা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যে নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন; তাঁরা সকলেই সত্য এবং আল্লাহ তাআলাই তাদেরকে প্রেরণ করেছেন।
সব নবি-রাসুলদের আবার মর্যাদায়ও রয়েছে তারতম্য। কাউকে আল্লাহ বেশি মর্যাদা দান করেছেন। কাউকে নবুয়তের সঙ্গে সঙ্গে বাদশাহী দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা এ সব বিষয় তুলে ধরে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন-
আয়াতের অনুবাদ
Advertisement
আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণসুরা বাকারার ২৫৩নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা কুরআনে নবি-রাসুলদের মর্যাদা প্রসঙ্গে বর্ণনা করেছেন। নবি-রাসুলদেরকে যে সব নিদর্শন দান করে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তুলে ধরেছেন সে বিবরণও।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এই রাসুলগণ! আমি তাদের এক জনের ওপর অন্যজনকে মর্যাদা দান করেছি। তাদের কারো সঙ্গে আল্লাহ কথা বলেছেন; যেমন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম তুর পাহাড়ে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন।এমনিভাবে পবিত্র মেরাজের রাতে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে কথা বলেছেন। হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে জিবরিল আলাইহিস সালামের মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। এমনকি তাকে অনেক প্রকাশ্য মুজিজাও দান করেছেন।
হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ‘কুম বিইজনিল্লাহ’ বললে মৃত ব্যক্তি জীবিত হতো; অন্ধ ব্যক্তি দৃষ্টি লাভ করতো; কুষ্ঠু রোগী আরোগ্য লাভ করতো। এ সবই তার মুজিজা বা অনন্য নিদর্শন।
হজরত সোলাইমান আলাইহিস সালামকে নবুয়ত ও বাদশাহী দান করেছিলেন; হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম নবুয়ত ও বাদশাহী লাভ করেছিলেন।
Advertisement
হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ধৈর্যের মুর্তপ্রীতীক হিসেবে সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন। হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম সৌন্দর্য লাভ করেছিলেন এবং হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামে আল্লাহ তাআলা ‘খলিল বা বন্ধুত্বের বৈশিষ্ট্য দান করেছিলেন।
এভাবেই সব নবি-রাসুলকে আল্লাহ তাআলা প্রেরণ করেছেন, তবে প্রত্যেককে দান করেছেন আলাদা আলাদা মর্যাদা, বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন।
সর্বোপরি প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে। সবার ওপরে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিসে পাকে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন-
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানের নেতা হবো। আর এ কথা গর্ব করে বলছি না’।
তিনি আরো বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমার হাতেই থাকবে আল্লাহর হামদের পতাকা এবং সব আদম সন্তান সে পতাকাতলে সমবেত হবে। আর এ কথাও আমি গর্ব করে বলছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সর্ব প্রথম কবর থেকে ওঠে আসবো (যখন জমিন বিদির্ণ হবে) আর এ কথাও আমি গর্ব করে বলছি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আমিই সর্ব প্রথম আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবো। আর আমার সুপারিশই সর্ব প্রথম কবুল করা হবে।’ (তিরমিজি, মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)
পড়ুন- সুরা বাকারার ২৫১ নং আয়াত
পরিশেষে...আল্লাহ তাআলার দরবারে সব নবি-রাসুল যেমন সমান মর্যাদার নন; তেমনি বান্দাদের মধ্যে সব বান্দা সমান হবে না। যারা আল্লাহ তাআলার বিধি-বিধান যথাযথ পালন করে; আল্লাহ তাআলাকে ভয় করার মতো ভয় করে; তাদের মর্যাদা আল্লাহর দরবারে অনেক বেশি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আয়াতের মর্মার্থ উপলব্ধি করে আমলি জিন্দেগি যাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি