আন্তর্জাতিক

শান্তি কামনায় মিয়ানমারে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনা

বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকাতে প্রথমবারের মতো পদক্ষেপ নিয়েছে মিয়ানমার সরকার। দেশটির সরকার প্রধান অং সান সু চির দল সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের অবসানে মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনের একটি স্টেডিয়ামে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনার আয়োজন করেছে। এই প্রার্থনায় দেশটির বৌদ্ধ, মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা অংশ নিয়েছেন।

Advertisement

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে প্রাণঘাতী সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বাড়তে থাকে। সহিংসতায় ৫ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ছয় সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখনও রোহিঙ্গা মুসলিমরা পালাচ্ছেন।

হামলার জবাবে সেনাবাহিনীর নৃশংস অভিযানের নিন্দা জানিয়ে আসছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে মিয়ানমার জাতিগত নিধনের চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি।

বাংলাদেশে সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের নতুন ঢেউ প্রবেশ করছে। সোমবারও প্রায় ১১ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। কেউ কেউ রাখাইন রাজ্যে খাদ্য ঘাটতি কথা বলছেন। এছাড়া মুসলিমদের গ্রামে এখনো হামলা হচ্ছে বলে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছে।

Advertisement

শরণার্থী সঙ্কটের জেরে আন্তর্জাতিক নিন্দা বাড়লেও বৌদ্ধ-সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযান এখনো জনপ্রিয়। দেশটিতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য সহানুভূতি নেই বললেই চলে; যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ঠেকাতে এই প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের একটি স্টেডিয়ামে বৌদ্ধ, মুসলিম, হিন্দু ও খিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে আন্তঃধর্মীয় প্রার্থনার আয়োজন করেছে দলটি।

এনএলডি মুখপাত্র অং শিন বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘এটা করা হচ্ছে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার জন্য। রাখাইনের শান্তির জন্য এবং দেশের শান্তির জন্য।’ স্টেডিয়ামের ভেতরে এবং বাইরে হাজার হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপস্থিত হওয়ায় বাইরে যানজটের সৃষ্টি হয়।

সু চির দল ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে বলে আশা করেছিলেন রোহিঙ্গারা। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের এই আশা ক্ষীণ হয়ে এসেছে। ২০১৫ সালে দেশটির জাতীয় নির্বাচনে একজন মুসলিম প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেয়নি সু চির দল।

Advertisement

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘু আদিবাসি হিসাবে স্বীকার করা হয় না। জাতীয়তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি আইনের যাঁতাকলে তাদেরকে সেদেশের নাগরিকত্বও দেয়া হয়নি। এই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচনা করা হয় দেশটিতে। তারা মিয়ানমারে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্য ও রাখাইন রাজ্যে জাতিগত রাখাইন বৌদ্ধদের বিদ্রুপের শিকার হয়ে আসছেন।

আদিবাসী সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি এবং নাগরিকত্বের দাবিতে গত ২৫ অাগস্ট রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালায় রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। হামলার জেরে উগ্র বৌদ্ধ ও সেনাবাহিনীর অভিযানে রাখাইন ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন রোহিঙ্গারা।

সূত্র : রয়টার্স।

এসআইএস/এমএস