রাজনীতি

নির্বাচন নিয়ে ১৩ প্রস্তাব বিকল্পধারার

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার বিকল্পধারা বাংলাদেশের সঙ্গে বসেছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিজেদের পক্ষে ১৩ দফা প্রস্তাবনা ইসির সামনে তুলে ধরেছে বিকল্পধারা।

Advertisement

বিকল্পধারার পক্ষে সংলাপে অংশ নেন দলটির প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান।

এছাড়া অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে শহিদুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউসুফ, শাহ আহমেদ বাদক, মাহাবুল আলম, মহসীন চৌধুরী, মুন্না চৌধুরী, ফাতেমা বেগম, হাফিজুর রহমান, মাহাফুজুর রহমান, ওবাইদুর রহমান, নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া ও আইনুল হক উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারসহ ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিবও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

Advertisement

বিকল্পধারা যে ১৩ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে সেগুলো হলো-

১. নির্বাচন কমিশনকে জাতির পূর্ণ আস্থা অর্জন করা প্রয়োজনক. প্রচলিত বিধানে জেলা প্রশাসকরা পদাধিকার বলে স্ব স্ব জেলায় রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু অধিকাংশ জেলা প্রশাসকই রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত হন এবং তারা রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলোর আমলে জেলা প্রশাসকরা নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে আসেন, তদ্রুপ জেলা প্রশাসকরা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের অধীনে দায়িত্ব পালন করবেন।খ. প্রিসাইডিং অফিসার ও পুলিং অফিসাররা যে জেলায় ভোটার হবেন তাকে সেই জেলার দায়িত্ব দেয়া যাবে না।

২. ভোটার তালিকা ভোটার তালিকা নির্ভুল এবং হালনাগাদ করতে হবে। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনীর সাহায্য নিতে হবে।

৩. সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ প্রতিবারই জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিশন কিছু কিছু সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হন। এতে বিভিন্ন বিতর্ক এবং জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ মুহূর্ত থেকে আর কোনো সীমানা পুনর্নির্ধারণের প্রয়োজন নেই। জনপ্রতিনিধিদের একটি নির্ধারিত এলাকায় বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য এটা প্রয়োজন।

Advertisement

৪. প্রার্থীর যোগ্যতা/বৈধতানমিনেশন পেপার যাচাই প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হতে হবে এবং প্রত্যেক প্রার্থীকেই সমান মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে।

৫. নির্বাচনী প্রচারণাক. সব প্রার্থীর সমান সুযোগ থাকতে হবে।খ. কোনো সরকারি এবং প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না।গ. জনসভা, মিছিল ইত্যাদি সন্ত্রাসমুক্ত- এটা নিশ্চিত করার জন্য দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. ভোট কেন্দ্রক. আমরা মনে করি ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। এ প্রক্রিয়ায় কোনো দলীয় বা প্রশাসনিক বা প্রার্থীর প্রভাবমুক্ত থাকার জন্য নির্বাচন কমিশনের অবস্থান সুদৃঢ় হতে হবে।খ. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর ভোট কেন্দ্র পরিবর্তন করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা ক্রমে তা করতে হবে।গ. সুষ্ঠু ভোটদানের স্বার্থে প্রতিটি বুথে ভোটারের সংখ্যা ৩০০ থেকে ৫০০’র বেশি হতে পারবে না।

৭. সেনাবাহিনীনির্বাচনের এক মাস আগে সেনাবাহিনীকে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনের দিন ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিধান করবে। ভোট শেষে ১৫ দিন পর্যন্ত শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে।

৮. ভোটগ্রহণের দিনক. প্রতি ভোট কেন্দ্রের ভিতরে ৩-৫ জন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ৩-৫ জন সদস্যকে নিয়োজিত রাখতে হবে।খ. ভোটার কার্ড ব্যতীত অন্য কোনো পরিচিতিতে ভোটার ভোট প্রদান করতে পারবে না।গ. ভোট কেন্দ্রের ভেতর প্রার্থীর কোনো এজেন্ট বা প্রতিনিধি থাকার পদ্ধতি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে হবে।ঘ. ভোট কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে কোনো প্রার্থী অফিস স্থাপন করতে পারবেন না এবং প্রার্থীর ব্যাজ পরিহিত কোনো প্রতিনিধি থাকবে না।ঙ. প্রার্থীর প্রতিনিধিদের কেন্দ্র থেকে কমপক্ষে ২০০ গজ দূরে অবস্থান করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. না ভোট পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বার্থে ব্যালট পেপারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নামের পরেও ‘না ভোট’র বিধান থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্তির চেয়ে না ভোটের সংখ্যা বেশি হলে সেই ক্ষেত্রে সে আসনে ৯০ দিনের মধ্যে পুনঃভোটের ব্যবস্থা করতে হবে।

১০. ভোট গণনাক. ভোট প্রদান শেষ হওয়ার পর পরই সব প্রার্থীর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ভোট গণনা শুরু করতে হবে।খ. ফলাফল গণনা শিটে সব প্রার্থীর প্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকতে হবে।গ. ভোটের ফলাফল ভোট কেন্দ্রেই ঘোষণা দিতে হবে।ঘ. ফলাফল ঘোষণাপত্রে উপস্থিত পুলিশ, সেনাপ্রতিনিধি ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকের স্বাক্ষর থাকতে হবে।

১১. অভিযোগের নিষ্পত্তিনির্বাচনকালীন সময়ে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ উত্থাপিত হলে স্ব স্ব সংসদীয় আসনেই কমিশন কর্তৃক ‘বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নির্বাচনের অনূর্ধ্ব ছয় মাসের মধ্যে সে অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে হবে।

১২. নির্বাচনে যে কোনো পর্যায়ে যে কোনো নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারী নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধা প্রদান করলে অথবা নিরপেক্ষ নির্বাচন বিরুদ্ধ/বিতর্কিত কাজ করলে তার/তাদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ আদালতে/ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ আনা যাবে। যেহেতু এরূপ কর্মকাণ্ড একটি রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়, সেহেতু এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হোক। এর জন্য অবিলম্বে একটি অর্ডিন্যান্স প্রণয়ন করা হোক।

১৩. নির্বাচন অনুষ্ঠানে যারা বিভিন্ন পর্যায়ে পরিচালনা করবেন যথা: নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা, জেলা প্রশাসক, জেলার প্রধান বিচারক এবং প্রত্যেক নির্বাচনী কেন্দ্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন যথা: ইউএনও, ওসি, প্রিসাইডিং অফিসাররা, দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মকর্তারা এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে পবিত্র কোরআন/গিতা/বাইবেল ও ত্রিপিটক ছুঁয়ে নিরপেক্ষতা ও আন্তরিকতার শপথ নেবেন।

এএস/এনএফ/আরআইপি