২০১০ সালের ধসের পর পুঁজিবাজারে অনেক সংস্কার করা হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আসেনি বলে মন্তব্য করেছেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যন ড. এম খায়রুল হোসেন।
Advertisement
‘বিশ্ব বিনিয়োগ সপ্তাহ- ২০১৭’ উপলক্ষে মঙ্গলবার দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংস্কারের পরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস না আসার কারণ হিসেবে খায়রুল হোসেন বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শিক্ষার অনেক বড় ঘাটতি আছে। তাই এ ঘাটতি দূর করতে বিএসইসি দেশব্যাপী বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হতে হলে পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে উল্লেখ করে খায়রুল বলেন, ‘বাংলাদেশে যত বড় বড় প্রকল্প চলমান আছে, অর্থবাজার তার জন্য যথেষ্ট না। এর জন্য পুঁজিবাজারকে ব্যবহার করতে হবে। এ বাজারকে ব্যবহার করলেই বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবে।’
Advertisement
পুঁজিবাজারে ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে ওঠা-নামা থাকবে এটা স্বাভাবিক। এ বাজারে ঝুঁকি নিয়েই বিনিয়োগ করতে হবে। আর ঝুঁকি নেয়ার আগে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জেনে বুঝে বিনিয়োগ করতে হবে।
‘নিজের টাকা নিজেকেই পাহারা দিতে হবে। এর জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। যার জ্ঞানের গভীরতা যত বেশি হবে, তিনি তত ভালো করতে পারবেন। তবে আইনগত কোনো সমস্যা থাকলে বিএসইসি তার সমাধান করবে’ যোগ করেন খায়রুল হোসেন।
আইসিএমবি সভাপতি জামাল আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা, হেলাল উদ্দিন নিজামী, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান প্রমুখ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান। মূল প্রবন্ধে আরিফ বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র তুলে ধরেন।
Advertisement
আবাসন, স্বর্ণ, ফিক্সড ডিপোজিট ও পুঁজিবাজার বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে ব্যাপক হারে আবাসন ও স্বর্ণে বিনিয়োগ পরিস্থিতি খারাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারের যথেষ্ট প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত তিন বছরে পুঁজিবাজারের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আর গত ৮ বছরের হিসাব করলে দেখা যায়, পুঁজিবাজারে গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে কেন বিনিয়োগকারীরা লোকসান করেন তার কারণও উল্লেখ করেন বিএসইসির সাবেক এই কমিশনার। তিনি বলেন, আমাদের বিনিয়োগকারীরা সাতদিনেই রিটার্ন চান। ফলে তারা লোকসান করে। পুঁজিবাজার হলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের জায়গা। যারা দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করবে তারাই এখান থেকে ভালো মুনাফা নিতে পারবে।
বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের নিয়মনীতি অনেক স্বচ্ছ। পূর্বের সিকিউরিটিজ আইন-কানুন ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। পুঁজিবাজার এখন ডিজিটালাইজড। তাই ২০১০ সালের মতো পুঁজিবাজারে আর ধস হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই পুঁজিবাজারে অর্থ লুটের বানর ব্যবসায়ীদের আসার কোনো সুযোগ নেই।
হেলাল উদ্দিন নিজামী বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার অনেক সম্ভাবনাময়। এখান থেকে টাকা নিয়ে দেশের শিল্পায়ন করার যথেষ্ট সুযোগ আছে। ২০১০ সালের ধসের পর কমিশন বাজারে ব্যাপক সংস্কার করেছে। এই কমিশন পুঁজিবাজারকে একটি স্থিতিশীল জায়গায় দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে।
এমএএস/বিএ