বিনোদন

নতুন সংগঠনের নেতৃত্বে বাপ্পারাজ, মৌসুমী ও শাকিব খান

চলচ্চিত্রের নতুন সংগঠন ‘চলচ্চিত্র ফোরাম’র নেতৃত্বে আসছেন জনপ্রিয় শিল্পীরা। তাদের মধ্যে শিল্পী সমিতির দুইবারের সভাপতি শাকিব খানকে এক নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। এক নম্বর কার্যনির্বাহী সদস্য (ইসি) পদটির বিশেষত্ব হচ্ছে, সভাপতির অনুপস্থিতিতে ওই সদস্য সভাপতির দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। এছাড়া সভাপতি চাইলে তার ক্ষমতা ওই এক নম্বর ইসির কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।

Advertisement

এছাড়া নতুন এই সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে চিত্রনায়ক বাপ্পারাজকে। থাকছেন প্রিয়দর্শিনী মৌসুমীও, তার পদবি আন্তর্জাতিক সম্পাদক। সংগঠনটি গঠনের সঙ্গে জড়িত একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র জাগো নিউজকে এমনটা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে গঠন করা এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে প্রযোজক নাসিরউদ্দিন দিলুকে এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কাজী হায়াৎকে। শুধু তাই নয়, কমিটির বিভিন্ন পদে থাকবেন জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ, ওমর সানি, অমিত হাসান, মোহাম্মদ ইকবাল, নাদের চৌধুরী, ববিসহ আরও অনেকে। চমক হিসেবে শোনা যাচ্ছে নির্মাতা ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনেরও নাম।

এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক শিল্পী-কলাকুশলী এ সংগঠনে নাম লিখিয়েছেন। যাদের নাম এবং সংঠনের কার্যাবলি সবকিছুই আনুষ্ঠানিকভাবে ২ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা করা হবে।

Advertisement

এদিকে চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক নায়ক ফারুকের কাছে চলচ্চিত্র ফোরামের যাত্রা শুরু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টিকে উড়িয়ে দিতে চাইলেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘কোনো সংগঠন হচ্ছে কিনা সেটি আমার দেখার বিষয় নয়। হলে ভালো। যদি তারা চলচ্চিত্রের ভালো করতে পারে তাহলে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

ফারুক বলেন, ‘ঘরে ঘরে একটি করে সংগঠন তৈরির অধিকার আছে সবার। আর সুপারস্টারের সঙ্গে সংগঠন থাকতেই পারে! আসল কথা হচ্ছে, কেউ সংগঠন তৈরি করলে চলচ্চিত্র পরিবারের কিছু আসে যায় না।’

প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে। পাশাপাশি শিল্পী সমিতির গেল নির্বাচনে সভাপতি পদে পরাজিত প্রার্থী চিত্রনায়ক ওমর সানী নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাকে সমর্থন দিয়ে বিপুল ভোটে সদস্য নির্বাচিত হয়েও সমিতির কমিটি থেকে সরে দাঁড়ান মৌসুমী। তখন থেকেই চেষ্টা চলছিল নতুন সংগঠনের।

এরই মধ্যে যৌথ প্রযোজনাকে কেন্দ্র করে গত ঈদুল ফিতরে চলচ্চিত্রের ১৮টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় চলচ্চিত্র পরিবার। চলচ্চিত্র পরিবার যৌথ প্রযোজনার সঠিক নিয়মনীতির দাবিতে আন্দোলনেও নামে। সেই সূত্র ধরে জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আব্দুল আজিজকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেনচলচ্চিত্রের এ সংগঠন।

Advertisement

অন্যদিকে দেশীয় নির্মাতা ও টেকনিশিয়ানদের নিয়ে অশালীন মন্তব্য করার জের ধরে ও যৌথ প্রযোজনার নামে যৌথ প্রতারণাকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে চলচ্চিত্র পরিবারের সঙ্গে বিবাদে জড়ান শাকিব খান। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাকেও বয়কট করার ডাক দেয় চলচ্চিত্র পরিবার।

একইভাবে কাজী হায়াৎসহ আরও বেশ ক’জন নির্মাতা ও শিল্পী নিয়ম না মেনে যৌথ প্রযোজনার পক্ষ নিয়ে জাজের সমর্থন দেন এবং চলচ্চিত্র পরিবারের নেতাকর্মীদের নিয়ে নানা কটূ মন্তব্য করেন। সেই মন্তব্যের বিপরীতে পাল্টা মন্তব্য আসলে চলচ্চিত্র পরিবারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব-বিরোধ দেখা দেয় তাদের।

ধারণা করা যাচ্ছে, এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের জের ধরেই চলচ্চিত্র পরিবারের ওপর ক্ষুব্ধ নির্মাতা, প্রযোজক, শিল্পীরা মিলে নতুন এ সংগঠনটি করতে যাচ্ছেন। তবে এ সংগঠনটি রয়েছে সমালোচনার মুখে। সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে বাপ্পারাজের নাম। নিজের বাবা নায়করাজ রাজ্জাকের স্মরণসভায় এসে চলচ্চিত্রের মানুষদের বিভাজন নিয়ে মন খারাপ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, চলচ্চিত্রের স্বার্থে সবাইকে এক হয়ে থাকতে হবে।

এবার চলচ্চিত্রের মূল সংগঠনগুলোকে পাশ কাটিয়ে গঠিত হতে যাওয়া নতুন সংগঠনে তার নাম দেখে অনেকেই অবাক হয়েছেন। হচ্ছে নানা আলোচনাও। সংগঠনটি নিয়ে এফডিসিসহ কাকরাইলপাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে অনেক কথাই, যা সার্বিক চলচ্চিত্রের ইমেজকে ফেলেছে করুণ সংকটে, এমনটাই মনে করছেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা।

সবার প্রত্যাশা- ব্যক্তিগত ক্ষোভ, ক্ষমতার লোভ, জনপ্রিয়তার অহংকার আর দুষ্ট স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে একই ছায়াতলে ফিরে আসবেন চলচ্চিত্রের সব মানুষ। মুখোশের আড়াল ভেঙে জুনিয়র-সিনিয়র সবাই মিলেমিশে হাল ধরবেন বেহাল দশায় আক্রান্ত ঢাকাই ছবির। মুমূর্ষু শিল্পটি বাঁচাতে একতার বিকল্প নেই।

এনই/এলএ