মানুষের জীবনের একমাত্র চাওয়া হলো সঠিকপথ প্রাপ্তি। আল্লাহ তাআলার একান্ত রহমত ছাড়া সঠিক পথের সন্ধান লাভ সম্ভব নয়। দুনিয়াতে মানুষের প্রতি মহান রবের সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো সঠিক পথের ওপর দায়েম এবং কায়েম রাখা।
Advertisement
আল্লাহ তাআলা মানুষকে সঠিক পথ প্রদানের আগে চরম দুঃখ-দুর্দশা ও অভাব ও অনটন দিয়ে তাদের ঈমানের অগ্নি পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। যারা এ বিপদের সময় এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন; তারাই সফলকাম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
‘যখনই তাদের সামনে (কোনো পরীক্ষা) সমস্যা এসে উপস্থিত হয়; তখনই তারা বলেন, আমরাতো আল্লাহর জন্যই; আমাদের তো (একদিন) আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। (প্রকৃতপক্ষে) এরা হচ্ছে সে সব লোক যাদের ওপর রয়েছে তাদের মালিকের পক্ষ থেকে অবারিত রহমত ও অপার করুণা; আর এ সকল লোকেরাই সঠিক পথ প্রাপ্ত। (সুরা বাক্বারা আয়াত ১৫৬ ও ১৫৭)
বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির ধৈর্যধারণ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রসঙ্গে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি বর্ণনা করেন, ‘মানুষ বিপদে পতিত হয়ে যদি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলেন; তবে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকে (বিপদের পরিবর্তে) পূর্ণফল দান করেন এবং এর ফলে আরো উত্তম বস্তুও দান করে থাকেন।’
Advertisement
দয়ার নবি উম্মতের জন্য বিপদের ধরণ বর্নণা করতে গিয়ে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে একটি উদাহরণ বর্ণনা করেন-‘একবার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ঘরের বাতি (আলো) নিভে গেলে তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন’ পাঠ করেন। এতে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এটাতো সামান্য একটি বাতিমাত্র। বিশ্বনবি বললেন, ‘যে বস্তুতে মু’মিন কষ্ট পায় এবং এতে তাঁর খারাপ লাগে; তাই তার জন্য বিপদ। (আবু দাউদ)
স্মরণ রাখতে হবেশুধুমাত্র বিপদ-আপদে মুখে মুখে ‘ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন’ বললেই মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পাবে না। বরং ‘ইন্না লিল্লাহি ... রাজিউন’ মুখে উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরে এ কথা স্বীকার করে নেয়া যে-আমরা (সবসময়) আল্লাহ তাআলার কর্তৃত্বাধীন; আল্লাহর পথে যে কাজই করা হোক তা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা অর্থাৎ দুনিয়ার সব জিনিসও আল্লাহ তাআলার; আর তা ব্যয় করতে হবে তাঁরই পথে।
কারণ একদিন না একদিন মানুষকে সেই মহা মনিব ‘আল্লাহর দিকেই (মানুষকে) ফিরে যেতে হবে’। অর্থাৎ মানুষসহ কারোর পক্ষেই চিরকাল এ দুনিয়ায় অবস্থান করার সুযোগ নেই। সমগ্র সৃষ্টির শেষ গন্তব্যস্থলও আল্লাহর নিকটে।
বিপদগ্রস্ত লোকদের প্রতি আল্লাহ তাআলার পরবর্তী নির্দেশবিপদে ধৈর্যধারণকারী লোকদের প্রাপ্তি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা পরবর্তী আয়াতে উল্লেখ করেন, ‘যারা এ বিশ্বাস পরিপূর্ণভাবে লাভ করবে, তাঁদের জন্য রয়েছে মহান প্রভুর ক্ষমা; তাঁদের ওপর বর্ষণ করা হয় অবিরত রহমত। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে সঠিক পথের ওপর পরিচালিত করেন।’
Advertisement
বিপদে ধৈর্যধারণের নেয়ামতস্বরূপ মুমিন বান্দা ২টি জিনিস লাভ করেন। যা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন-ধৈর্যশীল ব্যক্তিরাই দুটি জিনিস লাভ করেন। একটি হলো সালাত অর্থাৎ ক্ষমা আর অপরটি হলো রহমত অর্থাৎ বরকত। আর এ দু’টির মধ্যেই একটি জিনিস নিহিত রয়েছে আর তা হলো হিদায়াত তথা সঠিক পথ প্রাপ্তি।’
পরিশেষে...দুনিয়ার যাবতীয় বিপদে ওই ব্যক্তিই সঠিক পথের সন্ধান পাবেন, যারা হাজারো বিপদে মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করবেন। কথা এবং কাজে তা বাস্তবায়ন করবেন। মন ও মননে এ ধারণা লালন করবেন যে, ‘সব কিছুই আল্লাহ তাআলার জন্য; আর অবশেষে তাঁরই নিকট ফিরে যেতে হবে।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম মিল্লাতকে সঠিক পথ প্রাপ্তিতে বিপদ ও মুসিবতে তাঁরই ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। মানুষের জন্য ক্ষমা এবং রহমত নাজিল করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর