আইন-আদালত

ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়, স্বাস্থ্য সচিবকে ফের হাজিরের নির্দেশ

রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় স্বাস্থ্য সচিবের দেয়া প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি আদালত। আজ আদালতে উপস্থাপন করা ব্যাখ্যা উপযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য না হওয়াই আগামীকাল বৃহস্পতিবার যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে এবং সচিবকে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

Advertisement

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।

গত ২১ আগস্ট স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। সে অনুসারে বুধবার হাজির হন সচিব।

Advertisement

মনজিল মোরসেদ বলেন, রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের রায়ে ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

এরপর স্বাস্থ্য সচিবের পক্ষে সোমবার একটি প্রতিবেদন দেয়া হয়। যাতে বলা হয়- ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। অথচ আদালত জানতে চেয়েছিল কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ব্যবস্থা না নেয়ায় ব্যাখ্যা দিতে স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল হককে ২৩ আগস্ট তলব করেছেন হাইকোর্ট। ওই দুই কর্মকর্তা হলেন- ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন।

বুধবার আদালত বলেন, ১৬ মার্চ থেকে বিবাদীরা বসে আছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ওই ঘটনায় মোট ৭৬ শিশু মারা গেছে। আপনি (দুই কর্মকর্তা) বহাল তবিয়েতে আছেন। আর বলতেছেন দেখতেছি। এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আগে সতর্ক তারপর বরখাস্ত। সতর্ক না করলে জটিলতার সৃষ্টি করত।

আদালত বলেন, আপনিতো (দুই কর্মকর্তা) জামাই আদরে আছেন।মনজিল মোরসেদ বলেন, দুজনকে বদলি বা সাসপেন্ড কিছু করেনি। তখন আদালত বলেন, ব্যবস্থাতো নেয়া হয়নি। আমরাতো আগে থেকে বলেই আসছি। পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার এ বিষয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম তুলে ধরেন। আদালত বলেন, কোর্টকে আর খাটো করার চেষ্টা করবেন না। মার্চ থেকে বলে আসছি।

Advertisement

এক পর্যায়ে কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ব্যবস্থা নেয়ার আগে শোকজ তদন্ত আছে। আমরা ব্যাখ্যা তৈরি করার জন্য সময় পাইনি। আমাদের সময় দরকার। তখন আদালত বলেন, আগামীকাল যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দিবেন। ৭৬ শিশু মারা গেল । আপনার (সচিব) ছেলে-মেয়ে এখানে থাকে না। যারা মারা গেছে, এরাতো মরার জন্য জন্মেছে। এটা দুর্ভাগ্য জনক। এদেশ গরিব হতে পারে। এভাবে শিশুরা মারা যাবে সে শিক্ষাতো কাউকে দেয়নি।

২০০৯ সালে রিড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে অনেক শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার বিচার শেষে গত বছরের ২৮ নভেম্বর পাঁচজনকে খালাস দেন বিচারিক আদালত।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারিক আদালত বলেছিলেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর মামলাটি করার ক্ষেত্রে ১৯৮০ সালের ড্রাগ আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করেনি। মামলায় যথাযথভাবে আলামত জব্দ করা, তা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে প্রেরণ এবং রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন আসামিদের দেয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে ড্রাগ আইনের ২৩, ২৫ ধারা প্রতিপালন করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে তৎকালীন ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম ও আলতাফ হোসেন চরম অবহেলা, অযোগ্যতা ও অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

এ দিকে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পরে হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে ৯ মার্চ।

এফএইচ/জেএইচ/জেআইএম