দেশজুড়ে

ভারতীয় গরুর দখলে পঞ্চগড়ের পশুহাট

উত্তরের সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ে জমে উঠছে কোরবানির পশুর হাট। তবে জেলা সদরের রাজনগরহাট, দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জহাট ও তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান হাটসহ প্রধান গরুর হাটগুলো এখন ভারতীয় গরুর দখলে। ভারতীয় বড় আকারের বল গরুর আগ্রাসনে দেশি গরুর উপযুক্ত দাম নেই। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন গৃহস্থ কৃষক ও খামার মালিকরা।

Advertisement

দেশের অন্যান্য এলাকাতেও ভারতীয় গরুর আধিক্যের কারণে স্থানীয় হাটগুলোতে বাইরে থেকে আসা বেপারিদের সংখ্যাও কম। সঙ্গত কারণে উপযুক্ত দাম না পেয়ে ক্ষুদ্র খামারি আর কৃষকরা গৃহপালিত গরু হাটে বেঁচতে পারছেন না।

তবে স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবির দাবি, পঞ্চগড়ে করিডোরের ব্যবস্থা না থাকায় ভারতীয় গরু কোনো সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে না। এ নিয়ে বিজিবির কোনো নির্দেশনাও নেই বলে জানায় পঞ্চগড় বিজিবি ১৮। সরেজমিন রাজনগর, শালবাহান, ভাউলাগঞ্জসহ বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় গরুতে সয়লাব এসব কোরবানির পশুর হাট। ফলে কমে গেছে দেশীয় গরুর দাম।

সদর উপজেলার ৩নং সদর ইউনিয়নের ডুডুমারি এলাকার কৃষক ফয়জুল ইসলাম বলেন, কোরবানির হাটে বেঁচবো বলে দুইটি গরু প্রায় দুই বছর ধরে লালন পালন করেছি। একটি গরু ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে দাম হওয়ার কথা। কিন্তু ক্রেতারা ৩৫ হাজার টাকার উপর দাম বলছেন না। এই দামে বিক্রি করলে গরুর পেছনে খরচও উঠবে না।

Advertisement

একই উপজেলার গরিনাবড়ি এলাকার কৃষক জাবেদুল ইসলাম বলেন, ক’দিন আগেও ভারতীয় গরু তেমন ছিল না। তখন ভালোই দাম ছিল গরুর। বর্তমানে অবাধে চোরাপথে ভারতীয় গরু আসার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

নিয়ম অনুযায়ী ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর স্থানীয় বিজিবি থেকে একটি ছাড়পত্র নিয়ে সেসব ভারতীয় গরু করিডোরের মাধ্যমে বৈধ করার কথা। সেক্ষেত্রে গরু প্রতি একটি নিদৃষ্ট হারে রাজস্ব পাবে সরকার। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় গরু আসার ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না থাকায় মিলছে না বিজিবির কোনো ছাড়পত্র। এজন্য চোরাপথে আসা এসব গরু করিডোর ছাড়াই হাটে কেনাবেচা হচ্ছে। এতে এক দিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও খামার মালিকরা। অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এদিকে জেলার তিনপাশ জুড়ে ২৮২ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত। এই সীমান্ত এলাকার কয়েকটি পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়া নেই। এসব পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন রাতের আধারে চোরাপথে শতশত ভারতীয় গরু ঢুকছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। তেঁতুলিয়া, আটোয়ারী ও সদর উপজেলার কমপক্ষে ৯টি পয়েন্ট দিয়ে এসব গরু পঞ্চগড়ে ঢুকছে এসব গরু। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা গরু একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সেখান থেকে ট্রাকে করে চলে যায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

আর তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর, আটোয়ারীর ধামর এবং সদর উপজেলার হাড়িভাষা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসা গরু উঠে পঞ্চগড়ের প্রধান পশুর হাট রাজনগর ও শালবাহান হাটে। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে চোরাকারবারিরা করিডোর ছাড়াই গরু হাটে তুলছেন।

Advertisement

স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা দেশি গরুর ব্যবসা করি। কিন্তু বাজারের দেশি গরুর পাশপাশি ভারতীয় গরু কেনাবেচা হচ্ছে। করিডোর ছাড়াই হাটে গরু বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় গরুর জন্য দেশি গরুর দাম কিছুটা কম।

পঞ্চগড় ১৮ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আল হাকিম মোহাম্মদ নওশাদ বলেন, পঞ্চগড়ে করিডোরের মাধ্যমে ভারতীয় গরু প্রবেশের কোনো ব্যবস্থা নেই। ভারতীয় গরু আসা এবং করিডোর নিয়ে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনাও নেই। এছাড়া সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে ভারতীয় গরু ঢোকার তথ্য সঠিক নয়। সীমান্তে সার্বক্ষণিক আমাদের টহল ব্যবস্থা রয়েছে।

সফিকুল আলম/এফএ/আইআই