জাতীয়

সড়কে দুর্ভোগের আশঙ্কায় ট্রেনে চাপ বাড়ছে

একদিকে বন্যা অন্যদিকে বৃষ্টিপরবর্তী মহাসড়কে খানাখন্দের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানের সড়ক যান চলাচলের জন্য প্রায় অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। সে কারণে এবার ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে ঘরমুখো মানুষের এমন আশঙ্কা থেকে ট্রেনযাত্রার চাহিদা বেশি যাত্রীদের মাঝে।

Advertisement

বন্যার কারণে মহাসড়কগুলোর বেহলা দশার ভোগান্তি ও নিরাপদে গন্তব্যে যাওয়ার লক্ষ্যে রেলপথকেই এবার বেছে নিচ্ছেন যাত্রীরা। অন্যবারের তুলনায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিটপ্রত্যাশীদের উপস্থিতি বাড়ছে কমলাপুরে।

শনিবার কমলাপুর স্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, রেলস্টেশনে টিকিট কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ সারি। টিকিট কাউন্টারের সামনে থেকে এ লাইন সিঁড়ি ছাড়িয়ে বাইরে গিয়ে ঠেকেছে। কমলাপুরে ২৩টি কাউন্টারে সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে।

দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিট কাটতে ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মাহফুজ রহমান। তিনি বলেন, ট্রেনে খুব ভিড় হয় বলে প্রতিবার বাসেই যাই। কিন্তু এবার বন্যা, রাস্তায় খানাখন্দে অতিরিক্ত যানজট এবং দুর্ঘটনার শঙ্কা থেকে যায়। তাই এবার ঈদে পরিবারসহ ট্রেনে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Advertisement

তিনি বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সবাই বলাবলি করছে এবার স্টেশনের কাউন্টারগুলোতে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের উপস্থিতি অন্যবারের তুলনায় বেশি। বন্যা-বৃষ্টির কারণে সড়কের বেহাল দশার বিষয়টি মাথায় রেখে সবাই হয়তোবা ট্রেনের টিকিটে আগ্রহী। ২৮ তারিখের অগ্রিম টিকিটের জন্য মানুষের যেমন লম্বা লাইন এতে করে মনে হচ্ছে টিকিটিই হয়তোবা পাব না।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়ানো আরেক টিকিটপ্রত্যাশী চাঁদনী আক্তার বলেন, নিয়মিত বাসেই যাতায়াত করি। কিন্তু এবার বন্যা আর বৃষ্টির কারণে সড়কপথে খানাখন্দ হয়েছে ফলে যানজট বেশি হতে পারে। তাই ট্রেনের টিকিট কাটতে এসেছি।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, টিকিটের জন্য দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এখানে ২৩টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র দুটি নারীদের জন্য। এ সংখ্যা বাড়ালে নারীদের ভোগান্তি একটু কম হত।

অনেকে মনে করেন, কোরবানির ঈদে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি থাকবে কোরবানির পশুবোঝাই ট্রাকের চাপ। ফলে সড়কপথে অতিরিক্ত যানজট হয় তাই ট্রেনেই এবার তুলনামূলক স্বস্তির যাত্রা হবে।

Advertisement

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত ট্রেনে যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। ট্রেনে যাতায়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কারণে স্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশীদের সংখ্যা বাড়ছে। তারা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কিনতে পারছেন।

তিনি বলেন, কমলাপুর থেকে প্রতিদিন ৩১টি ট্রেনের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ অনলাইন, ৫ শতাংশ ভিআইপি, ৫ শতাংশ রেলওয়ে কর্মকর্মতা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ। বাকি ৬৫ শতাংশ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে।

অগ্রিম টিকিটআজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ আগস্টের টিকিট। ক্রমান্বয়ে যাত্রীরা ২০, ২১ ও ২২ আগস্টের যথাক্রমে ২৯, ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকিট কাটতে পারবেন।

ফিরতি টিকিটঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা মানুষের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ২৫ আগস্ট থেকে। ঈদ ফেরত যাত্রীদের জন্য রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ওইদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি হবে। ২৫ আগস্ট পাওয়া যাবে ৩ সেপ্টেম্বরের টিকিট। এরপর ক্রমান্বয়ে ২৬, ২৭, ২৮ ও ২৯ আগস্ট পাওয়া যাবে যথাক্রমে ৪, ৫, ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বরের ফিরতি টিকিট। তবে ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।

ঈদযাত্রায় ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেনঈদকে সামনে রেখে এবার যাত্রীদের সুবিধার্থে ও নির্বিঘ্নে চলাচলে ৭ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হবে। বিশেষ ট্রেনগুলো ঈদের আগের ৪ দিন ও ঈদের পরে ৭ দিন চলাচল করবে।

এসব ট্রেনের মধ্যে রয়েছে- দেওয়ানগঞ্জ স্পেশাল : ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

চাঁদপুর স্পেশাল ১ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

চাঁদপুর স্পেশাল ২ : চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

রাজশাহী স্পেশাল : রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

পার্বতীপুর স্পেশাল : পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর ২৯ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর এবং ৩ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

শোলাকিয়া স্পেশাল ১ : ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৌরববাজার ঈদের দিন চলাচল করবে এবং শোলাকিয়া স্পেশাল ২ : ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিং ঈদের দিন চলাচল করবে।

ঈদে রেলওয়ের বিশেষ পরিকল্পনাএবার ঈদে যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে রয়েছে-টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধ : ঢাকা, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় টিকিট কালোবাজারি প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তাছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।

নাশকতা প্রতিরোধ : চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধকল্পে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।

কোচ সংযোজন : পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ থেকে ৭২টি এমজি ও সৈয়দপুর ওয়ার্কশপ থেকে ৬৬টিসহ (২৫টি এমজি ও ৪১টি বিজি) মোট ১৩৮টি কোচ শপ আউট-টার্ন হবে। ১৩৮টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২৯৬টি কোচ চলাচল করবে। গত বছর ১৭০টি শপ আউট-টার্নসহ মোট ১২২২টি কোচ চলাচল করছে। এ বছর ৭৪টি কোচ বেশি চলাচল করবে।

লোকোমেটিভ সরবরাহ : বিদ্যমান লোকোমেটিভ সরবরাহ পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১১টি (বিজি ৮৬টি ও এমজি ২৫টি) সহ মোট ২২৭টি। অর্থাৎ, ঈদে পূর্বাঞ্চলে ১১৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ১১টি সহ মোট ২২৯টি লোকোমেটিভ ব্যবহার করা হবে। গত বছর ২২৭টি চলাচল করেছে।

এদিকে, যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ঈদের ৩ দিন আগে থেকে কন্টেইনার ও জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন ছাড়া কোনো পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করবে না। তবে ঈদের দিন বিশেষ ব্যবস্থাপনায় কিছু মেইল এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে।

টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে জয়দেবপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো আসনবিহীন যাত্রী চলাচল করতে পারবেন না।

অন্যদিকে, সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ট্রেন চলাচলের সুবিধার্থে ট্রেন পরিচালনায় সম্পৃক্ত রেলওয়ে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ২৮ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সবধরনের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করবে না।

এএস/বিএ/জেআইএম