ভালোবেসে পরিবারের অমতে বিয়ে করেছে সুমন আর জুলিয়া (ছদ্মনাম)। দিনের পর দিন উৎকণ্ঠা, কী হয় না হয়! কত দুশ্চিন্তা, কত চোখের পানি। কিন্তু কেউ তাদের ভালোবাসা থেকে আলাদা করতে পারেনি। অনেকটা সংগ্রাম করেই দুই পরিবারকে রাজি করিয়েছেন সম্পর্কটি মেনে নিতে। তাদের সেই সংগ্রামের কথা এখনও আত্মীয়-পরিজনের মুখে মুখে। বিয়ের বছরখানেক ঘুরতে না ঘুরতেই জুলিয়ার বুক ভরা অভিমান আর অভিযোগ। স্বামী তাকে সময় দিচ্ছে না! চাকুরির কারণে দুজন দুই জায়গায়। দুজনেই সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। দিনশেষে অপেক্ষায় থাকেন জুলিয়া, কখন স্বামী তাকে ফোন করবে। কিন্তু অপেক্ষা ফুরায় না। ওদিকে জুলিয়া অপেক্ষার প্রহর গোনেন। এদিকে ক্লান্ত সুমন হয়তো ঘুমিয়েই পড়েছে! অভিমান আরো গাঢ় হয়। একটা ফোন করার সময়ও কি মেলে না! কীসের এত ব্যস্ততা! কিন্তু জুলিয়া তো ফোন করে খোঁজ নিতে পারে! একথা বলতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে যেন- কেন আমিই সবসময় খোঁজ নেবো, বিয়ের আগে তো প্রতিবেলায় খোঁজ নিতো, মিনিটে মিনিটে ফোন!
Advertisement
আরও পড়ুন: ভালোবাসার আরেক নাম মা
প্রায় সব জুটির মধ্যেই একটি কমন অভিযোগ থাকে- তুমি আমাকে আর আগের মতো সময় দিচ্ছ না! এই অভিযোগ আসতে পারে যেকোনো একপক্ষ থেকে অথবা দুই পক্ষ থেকেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অভিযোগ করে মেয়েটি। দুজনেই হয়তো পড়াশোনা করছেন অথবা দুজনেই চাকুরিজীবী। ব্যস্ততা দুজনেরই। তবু অপরপক্ষ থেকে একটু সময়, একটু খেয়াল আশা করা দোষের কিছু নয়। যদি আলাদা করে খোঁজ নাই রাখে, যদি ব্যস্ততাকেই বড় করে দেখা হয় তবে সম্পর্ক শীতল হতে বাধ্য!
সম্পর্ক হচ্ছে একটি সুতোর মতো। যদি দুইপক্ষ থেকেই টানটান করে ধরে রাখা হয় তবেই এটি ঠিক থাকে। যেকোনো একপক্ষ একটু শিথিল করলেই সম্পর্ক আর আগের অবস্থায় থাকে না। যখন আমরা কারো সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে সম্পর্কিত হই, সেখানে আলাদা কোনো চুক্তিপত্র থাকে না। থাকে কিছু প্রত্যাশা। সে আমাকে বুঝবে, সে আমাকে চাইবে, সে আমাকে ভাববে- এমন চাওয়া না থাকলে সেই সম্পর্ক প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে না। ঝামেলা বাঁধে যখন প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তি ঠিক মেলে না। তখনই সেই কমন অভিযোগ উঠে আসে- তুমি আমাকে আগের মতো বোঝো না!
Advertisement
আরও পড়ুন: ছেলেরা যখন মন থেকে ভালোবাসে!
যেকোনো আরাধ্য বস্তু পেয়ে গেলে তা আর আগের মতো আমাদের কাছে গুরুত্ব বহন করে না। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কি এমন হয়? আর একারণেই কি সম্পর্কের শুরুতে ছেলেদের আগ্রহ বেশি থাকে আর সম্পর্কের পরে সেটি কমে যায়? বিশেষজ্ঞরা হয়তো সেভাবে ব্যাখ্যা করবেন না। তারা হয়তো এভাবেই বলবেন যে ছেলেদের ব্যস্ততা তুলনামূলক বেশি থাকে। আর একারণেই এই দূরত্ব। কিন্তু মেয়েরা সেটি মানতে নারাজ। তাদের একটাই কথা- ব্যস্ততা কি আমাদেরও নেই?
যতদিন সম্পর্ক, ততদিনই এই মান-অভিমান-অভিযোগ চলতে থাকবে। ডিম আগে না মুরগি আগে সেই রহস্যের মতোই কে কাকে বেশি ভালোবাসে বা কে কাকে এড়িয়ে চলছে- এই বিতর্কও চলতেই থাকবে। আর এরই মাঝে বেঁচে থাকবে ভালোবাসাও। কারণ মান-অভিমান যতোই হোক, দিনশেষে তো ভালোবাসাই সত্যি! ব্যস্ততা হচ্ছে জীবনের জন্য আর জীবন হচ্ছে ভালোবাসার জন্য। তাই এক্ষেত্রে আমরা ভালোবাসাকেই জয়ী ঘোষণা করতে পারি।
এইচএন/এমএস
Advertisement