ভারতের একটি সরকারি হাসপাতালে চরম অব্যবস্থাপনার কারণে গত পাঁচ দিনে ৬০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা কেন্দ্র সেখানে তীব্র ক্ষোভ দেখা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলেই এতগুলো শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
Advertisement
তবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অক্সিজেন সঙ্কটে নয় শিশুগুলোর মৃত্যু হয়েছে বিভিন্ন রোগে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুরের বিআরডি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে।
প্রবল চাপের মুখে তড়িঘড়ি করে ওই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ রাজীব মিশ্রকে বরখাস্ত করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিং। তিনি বলেন, ‘যাই ঘটুক না কেন চিকিৎসার গাফিলতি তো রয়েছেই। দোষীদের কড়া শাস্তি হবে।’
কিন্তু রাজীব মিশ্রর দাবি, শিশুমৃত্যুর দায় নিয়ে তিনি নিজেই পদত্যাগ করেছেন। উত্তর প্রদেশের কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন যে এই হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার পর সেখানে সংকট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এর কারণে কোন শিশুর মৃত্যুর কথা তারা অস্বীকার করছেন।
Advertisement
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, রোগীদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে এসময় আতংক ছড়িয়ে পড়েছিল। মারা যাওয়া বেশিরভাগ শিশু হয় নবজাতক বা এনসেফালাইটিসে ভুগছিল।
অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী বেসরকারি সংস্থাটির দাবি, ৬৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকার সিলিন্ডার কিনে মাত্র ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বকেয়া না মেটালে যে অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব হবে না সেটা আগেই জানানো হয়েছিল।
আগস্টের ১ তারিখে তারা চিঠি দিয়ে শেষ বারের মতো বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। জেলার কর্মকর্তা অনিল কুমার স্বীকার করেছেন যে হাসপাতালটিতে বিল পরিশোধ নিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। তবে তিনি বলেন, হাসপাতালে অনেক রোগীকে যেহেতু গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছিল, তাই অনেক মৃত্যু স্বাভাবিক ভাবেই ঘটেছে। বেশিরভাগ মৃত্যু ঘটেছে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে।
উত্তর প্রদেশের গোরখপুর ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর একটি। রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রীও এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন যে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকটের কারণে এসব মৃত্যু ঘটেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর এ বিষয়ে তদন্ত করছে। স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, শিশুদের মারা যাওয়ার পেছনে অন্য কারণও রয়েছে। তবে কী সেই কারণ, তা নিয়ে স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
Advertisement
অনেক অভিভাবকই চিকিৎসা ব্যবস্থার অপ্রতুলতা নিয়ে অভিযোগ করছেন। আবার অনেকেই চোখের সামনেই বহু শিশুকে মারা যেতে দেখেছেন।
জেলা প্রশাসক রাজীব রৌটেলা জানিয়েছেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৩০ শিশুর মধ্যে ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে নিও-নেটাল ইউনিটে, ৫ জন মারা গেছে এনসেফ্যালাইটিস ওয়ার্ডে আর ৮ শিশুর মৃত্যু হয়েছে জেনারেল ওয়ার্ডে।
তার দাবি প্রত্যেকেই মারা গেছে রোগে ভুগে, অক্সিজেনের অভাবে নয়। অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কথা স্বীকার করলেও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, ৫০টি সিলিন্ডার হাসপাতালে মজুদ ছিল।
টিটিএন/এমএস